Friday, October 12, 2018

ধারাবাহিক গদ্য- চন্দন ঘোষ


            

             চিকিৎ"শকিং"ডায়েরিঃ গোলঘর না পাগলঘর

গোলঘর হাসপাতালে আসা ইস্তক শান্তিতে নেই সৌম্য। এ এক অদ্ভুত বিটকেল জায়গা। একটা ঢিল ছুঁড়লে হয় জুটমিল নয় মদের ঠেকে গিয়ে লাগে। এখানে বাবা ছেলেকে বকাঝকা করে ছুরি বার করে। শ্যামনগর আর কাঁকিনাড়ার ঠিক মাঝামাঝি এই জগদ্দল স্টেশন। আর তার পাশেই এই বিখ্যাত "গোলঘর" হসপিটাল। মাঝেমাঝে মনে হয় যেন বিহারে আছি। 
#
প্রথম দিন তো এমার্জেন্সিতে সৌম্যর বউনি হয়েছিল ৩০টাকা ধার না শোধ করার জন্যে গলায় বল্লম মারা কেস দিয়ে। চোখের সামনে জোয়ান ছেলেটা ছটফট করতে করতে টেঁশে গেল। তারপর জুয়ার আড্ডায় ছুরিমারামারি। দশাসই একটা লোক। তাকে দুজন মিলে ধরে নিয়ে এল। লোকটা পেট ছুরির ঘায়ে ছয় ইঞ্চি ফাঁক। নাড়িভূড়ি বেরিয়ে এসেছে আর লোকটার দুহাতে ধরে রেখেছে নিজের নাড়িভুড়ি। লোকটার জ্ঞান তখনও বেশ টনটনেই। ওই অবস্থায়ই সে বলে ওঠে, ক্যা সাব ম্যায় জিন্দা রহুঙ্গা তো। বদলা লেনা হ্যায় হামকো। জরুর লেঙ্গে হাম।  সৌম্য নিজের ভেতরের কাঁপুনিটা ঢাকতে ঢাকতে কী যে বলেছিল খেয়াল নেই।
#
আজ নাইট ডিউটিতে কার মুখ দেখে ঢুকেছিল কে জানে। সন্ধে রাতেই বার্ন কেস। যুবতি বৌটি রাগ করে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। প্রায় সেভেন্টি পারসেন্ট বার্ন। আর বরটা তাকে বাঁচাতে গিয়ে দুই হাত পুড়িয়েছে। মেয়ের মাও সেই মর্মে বয়ান দিল। রিপোর্ট লেখা হল। চিকিৎসাও শুরু হল। ও মা! একটু বাদেই এক ঝাঁক মহিলা গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির শ্লোগান দিতে দিতে ঢুকে পড়ল হাসপাতালে। তাদের দাবি, এটা সুইসাইড নয়, অ্যাটেম্পট টু মার্ডার। বধূ নির্যাতনের কেস। তারা এও দাবি করছে, সৌম্যই না কি মিথ্যে রিপোর্ট লিখে শশুরবাড়িকে বাঁচাতে চাইছে। প্রায় ঘুষের ইঙ্গিত করে আর কি! সৌম্য তো মহা ক্যাচালে পড়ে গেল। তবে কিনা বিপদে যেমন প্যান্ট খোলে, তেমন বুদ্ধিও খোলে অনেকের। সৌম্য চিন্তিত মুখে বলল, কিন্তু মেয়ে তো অন্য কথা বলছে। তারা বলে বসে, চলুন আমরা শুনতে চাই সে কী বলছে। কী মর্মান্তিক দাবি। সত্তর আশি শতাংশ পোড়া মেয়েটি বিছানায় চেঁচাচ্ছে। জল, একটু জল দাও। তার চারপাশ ঘিরে ধরেছে মহিলা সমিতির বিপ্লবীনিরা। তার মধ্যে একা কুম্ভ সৌম্য প্রথমেই গুছিয়ে মোক্ষম প্রশ্নটা করে ফেলল, বল মা, তাহলে কী হয়েছিল, কী ভাবে আগুন লাগালে। মেয়েটি প্রবল যন্ত্রণার মধ্যে সত্যি কথাটাই বলে দিল। বলল, আমার বরের ওপর খুব রাগ হয়েছিল। তাই কেরোসিন তেলের বোতল মাথায় উপুড় করে দেশলাই মেরে দিলাম। উঃ! জ্বলে গেল, জল, একটু জল। বিপ্লবী দিদিমনিদের মুখ চুন। গোটা বিপ্লবটাই ভেস্তে গেল। ধীরে ধীরে ভিড় পাতলা হয়ে গেল। 
#
সৌম্য হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। যাক বাবা, সে যে বেছে বেছে লিডিং কোশ্চেনটাই করেছে তা কেউ ধরতে পারেনি। এমার্জেন্সিতে ফিরে আয়েস করে একটা উইলস ফিল্টার ধরাল সৌম্য।

(ক্রমশ)


No comments:

Post a Comment

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে