Friday, October 12, 2018

কবিতা- অক্টাভিও পাজ (অনুবাদ- ঈশানী বসাক)




অক্টাভিও পাজ-এর কবিতা


আসা যাওয়ার মাঝে

যাওয়া আর আসার মাঝে
ঘুরতে থাকে দিন
ভালবাসা আর স্বচ্ছতার মতো ।
এই গোলাকার বিকেল থেমে থাকা জগত
আটকে থাকে পাথরের মধ্যে
কাঁপে তিরতির করে।

সবকিছু দেখতে পাই , সমস্ত বিশ্লেষণ করা
সব কাছে আছে তবুও ছুঁতে পারিনা।

কাগজ কলম গ্লাস পেনসিল
তাদের নামের ছায়ার আশ্রয়ে থাকে।

আমার কপালে সময় কাঁপতে থাকে
সেই একভাবে রক্ত চলাচল করে।

আলো পড়ে ফারাকহীন দেয়ালে
একটা ভুতূড়ে নাটকের ছায়ামহলে।

নিজেকে দেখতে পাচ্ছি একটা চোখের মণিতে
দেখছি নিজেকে তার ফাঁকা চাউনিতে।

মুহূর্ত ছড়িয়ে যায় চলৎশক্তি ছাড়াই
আমি থাকি , আমি যাই। আসলে আমি একটি বিরতি।



রাস্তা

এই যে এখানে একটা লম্বা নিস্তব্ধ রাস্তা:
আমি কালো রঙের মধ্যে হাঁটি , হোঁচট খাই আর পড়ে যাই
আবার উঠে দাঁড়াই , অন্ধ ভাবে হাঁটি,
আমার পা বুঝে নেয় বোবা পাথর আর শুকনো পাতার ফারাক।
কে যেন আমার পিছনে , সেও পায়ের পাতা দিয়ে পড়ে নেয় পাথর আর পাতা
আমি ধীরে চললে সেও ধীরে
আমি দৌড়ালে সেও দৌড়ায়
পিছনে ফিরি , কেউ নেই।
সবকিছু অন্ধকার , দরজা নেই
আমার পায়ের শব্দ জানে আমি এখানে।
প্রতিটি কোণে ঘুরি এই রাস্তার
যেখানে কেউ অপেক্ষা করেনা , পিছু নেয় না।
এখানে সেই লোকটাকে দেখি হোঁচট খায়
উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখে বলে, কেউ নয়।



চূড়া আর আকর্ষণ

ওই দেখো একটা স্থির থাকা গাছ
আরেকজন এগিয়ে আসছে দেখো
নদীর মতো গাছ
আমার ছাতিতে আঘাত করে
এত সবুজ প্রতিযোগিতা বড় সৌভাগ্যের:
তুমি লাল জামা পড়ে আছো
তুমি এই ঝাঁঝাপোড়া বছরের সাক্ষী।
কামের আগুন
তারাফল
সবাই বিশ্রাম নিচ্ছে
ঠিক যেন সূর্য।
সময় যেন বিশ্রামে একটা গভীর অন্ধকারের স্বচ্ছতায়।
উচ্চতায় ভিড় করছে পাখিরা
রাত বানাবে বলে ঠোঁট দিয়ে:
ডানায় করে দিন নিয়ে যায়
যেখানে আলোর চারা বসানো সেখানে

আমাদের জেদ আর টলমলে মনের মাঝে
আমরা হাঁটি, পা রাখি দু নৌকোয়।


ছোঁয়া


আমার হাত

তোমার অস্তিত্বের পর্দা খুলে নেয়

তোমাকে নগ্নতা দিয়ে সাজায়

তোমার শরীর থেকে চেহারা খুলে রাখো

আমার হাতগুলো তোমার দেহের জন্য আরেকটা শরীর বানাবে।


((অক্টাভিও পাজ একজন মেক্সিকান কবি । স্যুররিয়লিজম আর এক্সিসটেনসিয়ালিজমের পন্থার বিশ্বাসী তিনি। মিগুয়েল দে সার্ভান্টেস পুরস্কার উনিশশো একাশিতে পান। সাহিত্যের জন্য উনিশশো নব্বই তে নোবেল পুরস্কার পান তাঁর ঠাকুরদার গ্রন্থাগার তাঁকে সাহিত্যের প্রতি অনুপ্রাণিত করে। মেক্সিকান এবং ইউরোপিয়ান সাহিত্যের দ্বার উন্মুক্ত হয় তাঁর সামনে। খুঁজে পান জেরার্ডো দিয়েগো, অ্যান্টোনিও মাশাদোকে। ক্যাবেলেরা তাঁর প্রথম কবিতার বই। উনিশ বছর বয়সে লেখেন লুনা সিলভেস্ট্রে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন। ভারতের হাংরি জেনারেশনের কবিদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। উনিশশো সাতাত্তর এ পান জেরুজালেম পুরস্কার ।ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে উনিশ এপ্রিল উনিশশো আটানব্বইয়ে দেহত্যাগ করেন।)




No comments:

Post a Comment

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে