Friday, October 12, 2018

একগুচ্ছ তামিল কবিতা (অনুবাদ-সুবল দত্ত)






রাজগোপাল পার্থসারথি

তামিল
আমার জিভ ইংরেজি চেনে বাঁধা
ফিরলাম একপুরুষ পর, তোমার কাছে
দ্রাবিড়ীয় দুধ দাঁত সব ভেঙ্গে যাওয়ার শেষে
তৃষিত তোমার জন্য, অনিশ্চয়তায়
আমি এলোমেলো, টলছি ক্লান্ত ভাষায় কথা বলছি
ঘুমের গভীরে দীর্ঘশ্বাস

কুরাল* এখনো দাঁত মূর্ধা ঠোঁট একদম টাটকা নুতন 
নতুন নতুন শব্দ সংযোজন বোধ স্পর্শ  
এখন সেল্যুলয়েডের কাঁটায় বিদ্ধ হয়ে
ঘুরে যাচ্ছ বনবন
নিচে, মখমল নরম করিডোর দিয়ে
(
কুরাল - প্রাক আধুনিক ক্লাসিক তামিল সাহিত্য )

রাজগোপাল পার্থসারথি (জন্ম ১৯৩৪) সুবিখ্যাত তামিল কবি সমালোচক সম্পাদক। মূলতঃ তিনি ইংরেজি কবিতা লিখতেন। তাঁর বিখ্যাত কবিতার বই Rough Passage প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি মূল ধারায় ফিরে এসেছেন। কবিতাটি এই নির্দেশ করছে। 


ভৈরমুথু রামস্বামী নাৎপু

বন্ধুত্ব

এখন চায়ের সময়, প্লিজ 
জীবন দাবার গুটি চালানোর কথা ভাবতে হবে 
কি অসাধারন সায়েন্টিফিক নিয়ম
সমাধানের কতো সোজা রাস্তা 
যেমন, আমার দুশমনের দুশমন হোলো আমার বন্ধু 
কতো সহজ ভাবে বন্ধুত্বের নিয়মটি বলে দেয়
ভিন্ন ভিন্ন বন্ধুত্বের আলাদা সুবাস
যেমন বন্ধুত্বের বিবরন তেমনি ভিন্ন আনন্দ নির্যাস 
যেমন যেমন প্রেমের বিকাশ তেমনি রহস্যের অনুভব
হঠাৎ করে এক পলক দেখার আনন্দ
তেমনি মুহুর্তে প্রেম ঘৃণায় বদলে যাওয়া 
আর এই আশ্চর্য ঘটনা বলবার জন্যে কতো অস্থিরতা জাগে 

ভৈরমুথু রামস্বামী (১৯৫৪)একজন বিশিষ্ট তামিল কবি। তিনি 
পদ্মভূষন পদ্মশ্রী সাহিত্য একাডেমী সন্মানে বিভূষিত তাঁর কাব্য গ্রন্থ করুভাচি কাব্যম সুপ্রসিদ্ধ। 

সুন্দরা রামস্বামী(পাসুভিয়া
আমার লজ্জা

গাছ কিজানে তার কতো পাতা প্রস্ফুটিত হোলো 
ওর কি ইচ্ছে হয়না আকাশের আয়নায় নিজেকে দেখার 
যে হাত তার শিশু চারা উপড়ে ফেলে তার বিষয়ে কি ভাবে 
জ্যোৎস্না রাতে তার কেমন আনন্দ হয় 
পাখিদেরকে বাসার কথা কি বলে
এসব বুঝিনা বলে আমার লজ্জা হয় 

সুন্দরা রামস্বামী (1931)এক প্রখ্যাত তামিল কবি। ১৯৮৮তে একটি বিখ্যাত পত্রিকা কালচুভাডু প্রকাশ করেন। তিনি পাসুভিয়া নাম নিয়ে ১০৮ টি কবিতা লেখেন যা এখানে পপুলার। তিনি টরোনটো থেকে কুমারন আসান এওয়ার্ড কানাডা থেকে কথাচুড়ামনি সন্মানে বিভূষিত। 

রা. শ্রীনিবাসন 
পায়ে পায়ে প্রাকচেতনা

পথ 
বছরের পর বছর 
অশ্ব ক্ষুরের দাপটে বালুকণা 
ধু ধু ফাঁকা পথে সঙ্গীত মুর্ছনা আবেশ 
পাখির ডানার ছায়া পৃথিবীর বুকে আটকে থাকে 
আজকের দিন আগামীকাল কখন যে দূরে সরে যায়
ট্রেনের পিছন দিয়ে অপসৃয়মান রেল পথ
পায়ে পায়ে ইন্টুইশন, ফলিত পূর্বাভাস 
এক বিধ্বংসী বিনাশকারী 
তুমুল বৃষ্টি 

রা. শ্রীনিবাসন একজন প্রতিষ্ঠিত আধুনিক তামিল কবি কবিতার অনুবাদক। তিনি ৫০ দশকের নামী আধুনিক তামিল কবিদের কবিতা অনুবাদ করেছেন এখনো সেই কাজে রত। 

আর. চেরন
 আমি ভুলতে পারতাম

সব ভুলে থাকা যায় 
অসহায় কষ্টের জীবন
ছড়িয়ে পড়ে না গ্যালে রোডে একচিলতে আশা 
কম্পাসের কাঁটা সেখানেই থেমে থাকে 
আর আমার হৃদয়ের দিকেও নির্দেশিত কম্পাসের ছুঁচ
কাঁপছে... আমিও কাঁপছি 
একটা ঝলসানো উল্টে পড়া কার 
একটা ছিটকে পড়া জংঘার হাড় 
মণিহীন চোখের কোটর থেকে স্থির দৃষ্টি 
আকাশ পৃথিবীর মাঝে কোনো এক স্পটে 
ডিকম্যানস রোডে জমা বদরক্ত 
রক্তমাখা কালো মুন্ডহীন ছয়টি মানুষ 
আগুন থেকে বেরিয়ে আসা একটুকরো শাড়ি 
হাতঘড়ি পরা একটা বাঁ হাত
দাউ দাউ উজ্বলন্ত ঘর ছিঁড়ে পড়া দোলনা 
এক গর্ভবতী নিন্হালি (সিংহলি) মহিলা 
এইসব তো ভুলে থাকা যায় কিন্তু 
তোমার সন্তানকে এর থেকে কোথায় লুকিয়ে রাখবে
যখন চা বাগানে ঝাড়ির ওপর মেঘ নামে 
ঢেকে দেয় শেষ বিকেল 
অনেকদিন পর লুকিয়ে থেকে 
একটা ছোটো হাঁড়িতে ভাত বসিয়েছো
অধীর অপেক্ষায় কখন ভাত ফুটবে ... 
মেয়ে 
ভাঙ্গা হাঁড়ি ছড়িয়ে গেল  মাটিময় ছিটিয়ে পড়া
রোদে জ্বলা শুকনো খড়খড়ে ভাত 
তুমি ভুলবে কিভাবে

আর চেরন। শ্রীলঙ্কার জাফনাতে জন্ম। ছোটোবেলা থেকেই তিনি কবি। ১৯৮২ তে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ইরান্ডাভাসু সুর্য উথায়াম (দ্বিতীয় সূর্যোদয়) বর্তমানে প্রকাশিত মিলিন্ডাম কাডুলুক্কু (আর একবার, সমুদ্র) এই কবিতাটি ১৯৮৩ সালে কলম্বোতে ঘটনার প্রেক্ষিতে








No comments:

Post a Comment

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে