Tuesday, October 16, 2018

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে





অমিয়,
এতদিন পরে এই পাড়ারই দু-একটা বইয়ের দোকানে ঢুকেছিলাম। হা ঈশ্বর – থরে-থরে কী সব সাজিয়ে রেখেছে। যে-সব বইয়ের বহু বছর ধ’রে নাম শুনে আসছি, যে-সব বই বহু বছর ধ’রে পড়তে চেয়েছি, যাদবপুরে পড়াবার সূত্রে যে-সব বই পাগলের মতো খুঁজেছি, এখানে হাত বাড়ালেই তার যে-কোনোটিকে তুলে নেয়া যায়, মায় মঁতেসকিউ-র ‘‘পারস্য পত্র’’। সবই জানতাম, তবু জাজ্বল্যমান চোখে দেখে কেমন চমক লাগে। আসেত্ম-আসেত্ম অনেকগুলো পেপার-ব্যাক কিনতেই হবে – যদিও জানি তার প্রায় কোনোটাই আমি নিজে পড়বো না, যথাসময়ে তোমাদের উপভোগের জন্য পাঠিয়ে দেবো। পেপার-ব্যাক ছাড়া আর যা পাওয়া যায় সেদিকে তাকাতেও ভয় করে। এই ওয়াশিংটন স্কোয়ার পাড়ার নামান্তর হ’লো Greenwich Village সংক্ষেপে the Village, এককালে শিল্পীদের পাড়া ব’লে নামডাক ছিল, এখনো পূর্বগৌরব লুপ্ত হয়নি – বীটনিকদের বাসভূমি এখানেই শুনতে পাই। এ-পাড়ার পুরোনো বইয়ের দোকানগুলিও বিখ্যাত, পথ চলতে-চলতে কাচের জানলায় তস্করনয়নে দৃষ্টিপাত করি – একদিন ভাবছি সাহস ক’রে ঢুকে পড়বো, মহামূল্য পুরোনো এডিশনের ফাঁকে-ফোকরে হয়তো আমার সাধ্যের উপযোগী কিছু লুকিয়ে আছে। এদের এই প্রাচুর্যের সামনে আমরা কেমন অসহায় বোধ করি – খাবার, বই, কাপড়চোপড়, বিলাসদ্রব্য, যা-কিছু ভাবতে পারো, দোকানগুলো একেবারে উপচে পড়ছে যেন, রবিবারের নিউ ইয়র্ক টাইমস ব’য়ে নিতে আসতে মুটে ডাকতাম (যদি পাওয়া যেত), ছবিওলা পত্রিকা বই লোকেরা জঞ্জালের সত্মূপে ফেলে দেয়, কোনো-কিছু বিকল হয়ে গেলে না-সারিয়ে নতুন কেনে। পুরোনো জিনিশের উপর আমাদের যে-মমতা জন্মায়, সেই মোহ থেকে এরা একেবারে মুক্ত – কোনো স্মৃতির সেবা এরা করে না, জীবন এত জঙ্গম ক’রে ফেলেছে যে এক মুহূর্ত কোথাও দাঁড়াবার অবকাশ নেই। আমাদের দারিদ্রে্যর কথা অনেক শুনতে পাই, কিন্তু এই অত্যধিক প্রাচুর্যেও মন ঠিক তৃপ্তি পায় না – বড্ড বেশি, বড্ড বড্ড বড্ড বেশি, শেষটায় এরা নিজেরাই না একদিন সব ভেঙে-চুরে ছারখার ক’রে দেয়। বইয়ের কথাই ধরো : ভেবে দ্যাখো তুমি, একটা মানুষ জীবনে কত পড়তে পারো, আর প্রত্যেককেই কি গ্রীক চৈনিক ভারতীয় জর্মান রাশিয়ান সব সাহিত্য পড়তে হবে? একটা নেশার ঘোরে চলছে : যে-কোনো বিষয়ে যে-কোনো ভালো বই কিছুদিনের মধ্যে পেপার-ব্যাক-এ বেরোবেই, অচিরে না ফাউন্টেন পেনের মতো বাঁধানো বইও লুপ্ত হ’য়ে যায়, তাহ’লে বই জিনিশটার স্থায়িত্বই ভেঙে গেলো। ভগবান করুন, এ-দেশে যেন শেষ পর্যন্ত কিছু শিক্ষিত ধনী লোক টিকে থাকে – ঐ দুই বিশেষণের সমন্বয় সব দেশেই বিরল হ’য়ে আসছে, আমেরিকার সমাজ তো প্রায় শ্রেণীহীন। থাক এসব কথা, এ-সবে আমাদের কারো কিছু এসে যায় না, আসল কথা এই যে এখানে অনেক ভালো-ভালো বই পাওয়া যায়, কিছু তোমাদের পাঠাবো।
বুব
 (নিউ ইয়র্ক থেকে অমিয় চক্রবর্তীকে লেখা বুদ্ধদেব বসুর চিঠি)


সম্পাদকীয় দপ্তর- বেবী সাউ মণিশংকর বিশ্বাস সন্দীপন চক্রবর্তী
                            হিন্দোল ভট্টাচার্য শমীক ঘোষ






যোগাযোগ  ও লেখা পাঠানোর ঠিকানা - abahaman.magazine@gmail.com

সাক্ষাৎকার: হ্যারল্ড পিন্টার ( অনুবাদ-কুন্তল মুখোপাধ্যায়)








ল্যা  রি     বে    স্কি
হ্যারল্ড পিন্টারের অন্তর-দর্শন ,দ্য প্যারিস রিভিউ পত্রিকায় প্রকাশিত ,
তর্জমা – কুন্তল মুখোপাধ্যায়

হ্যারল্ড পিন্টার এখন চলে এসেছেন তাঁর পাঁচতলা ফ্ল্যাটে । এখান থেকে লন্ডনের রিজেন্ট পার্ক দেখা যায় । এখানেই তাঁর অফিস বসিয়েছেন এখান থেকে যে ভিউ পাওয়া যায় সেটা একটা বিশাল লম্বা হরিয়ালি পার্কল্যান্ড । পাশেই ডাক পন্ড ।১৯৬৬ সালের অক্টোবরে যখন এই ইন্টারভিউটি নেওয়া হয় সেসময় পাতা ঝরার কাল , আর আবছা লন্ডনের সূর্য মাঝে মাঝেই তাঁকে অন্যমনস্ক করে দিচ্ছিল । প্রশ্নগুলোর উত্তর দিচ্ছিলেন একটা আশ্চর্য গভীর , নাট্যচর্চিত স্বরপ্রয়োগে । বলার সময়ে যে বিষয়টা নিয়ে বলছেন তার প্রচুর গুণগত দিক নিয়ে এমনভাবে বলছিলেন যেন কোনও বিষয়ের শেষ সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছানোটা একেবারেই অসম্ভব ।কারও এমন ধারণাও হতে পারে যে – যেমন তাঁর নাটকের চরিত্রেরা, তেমনি তিনি নিজেও নিজের ভাবনার সাথে তন্নতন্নভাবে সম্পৃক্ত নিজের ভাবনা যাকে বিষণ্ণ আর এলোমেলো হয়ে ভাষার কাছে আসতে হয়  

এই ইন্টারভিউ নেওয়ার সময় কোনও প্রজেক্ট বা সেরকম কিছু ছিল না ,নিজের অনিচ্ছার আলসেমি নিয়ে প্রশ্নগুলো তাঁর কাছে ছিল অস্বস্তিকর নিজের রচনা  যে নিজের কাছে রহস্যের , আমোদের , আনন্দের আর ক্রোধেরও উৎস  সেটা দেখতে দেখতেই কখনও খুঁজে পাচ্ছেন কোনও সম্ভাবনা , কোনও অনিশ্চয় যেটা আগেও লক্ষ্য করেছেন অথবা ভুলে গেছেন ।কেউ এটা ভাবতেই পারে যে, যদি টেলিফোনের তার ছিঁড়ে জানালায় কালো পর্দা ঝুলিয়ে দিতে পারতেন , খুশি হতেন বেশি -যদিও জোর দেন যে , তাঁর যে “নিজের কাছে নিজের মারাত্মক একঘেয়েমি’’, সেটার সঙ্গে নিজের পরিপার্শ্ব বা প্রতিবন্ধকতার কোনও আঁতাত নেই ।

১৯৫৭ সালে যখন নিজের প্রথম নাটকগুলি লিখছেন , পিন্টার ছিলেন গৃহহীন , একটা রেপার্টারি স্টেজ কম্পানির সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন , বিভিন্ন ধরণের রহস্যময় অভিনয় করে বেড়াচ্ছেন সিসাইড রিসর্ট আর মফসসলের শহরগুলিতে ।তাঁর স্ত্রী , অভিনেত্রী ভিভিয়েন মার্চেন্ট , ট্যুরে তাঁর সঙ্গে , তবু ১৯৫৮সালে যখন অন্তসত্বা হন সেসময় একটা ঘর পাওয়া খুব জরুরী হয়ে উঠলো । আর সেজন্যে তাঁরা লন্ডনের নিস্প্রভ নটিংহিল গেট , যেখানে পিন্টার কেয়ারটেকারের কাজ করতেন ,সেখানেই বেসমেন্টের একটা ঘর ভাড়া নিলেন । যখন সন্তান ভূমিষ্ঠ হোল , সেসময় লোন নিয়ে তুলনায় নিস্প্রভ আরও একটা জেলায় , চিসউইকে ,চলে যেতে হোল । কিন্তু দুজনকেই পূর্ণসময়ের নাট্য-অভিনয়ের দিকে ফিরতে হল যখন ১৯৫৮সালে পিন্টারের প্রথম পূর্ণ-দৈর্ঘ্যের নাটক ‘দ্য বার্থডে পার্টি’ পূর্ণমাত্রায় ফ্লপ করে গেল ।দ্য কেয়ারটেকার –এর প্রযোজনা এনে দিল অর্থের স্বাচ্ছন্দ্য আর তাই চলে যাওয়া মাঝারি-মানের কিউ জেলায় আর তখনই ভাবতে হচ্ছিল ,শুধু লেখার উপরে নির্ভর করে জীবন কাটিয়ে দেওয়ার ভাবনা ।মিঃ পিন্টার নিজের পরিবার নিয়ে এলেন ওয়রদিং-এর পশ্চিম উপকূলের সামনের দিকের রিজেন্সিহাউসে ।কিন্তু লন্ডনের থেকে দুঘণ্টার গাড়ি-দূরত্ব প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল ,তাই আবার একটা ভাড়া ঘর নেওয়া কেনিংস্টনে আর শেষে পিন্টারের চিত্রনাট্যগুলির জন্যেই রিজেন্ট পার্কের এই বাড়িখানি কিনে ফেলা সম্ভব হয়েছিল  । যদিও সম্পূর্ণ সারানো হয়নি কিন্তু এই বাড়িটির সাইজ আর কমফোর্ট  ঠিকঠাকই বলা যায় , যেমন পিন্টারের নিজস্ব দপ্তরটিও -------- একটা আলাদা রুম তাঁর সচিবের , একটা ছোট্ট বার যেখানে পিন্টার বিয়ার আর স্কচ পান করেন দিনের বেলা , কাজে অথবা অকাজেসারি সারি বুকশেল্ভগুলি অর্ধেক জায়গা জুড়ে রয়েছে আর একটা বাগানমুখী ভেলভেট-মোড়া আরাম কেদারা ,যার উপরে পা ছড়িয়ে বসা যায় । দেয়ালে ফেলিক্স টপলস্কি’র করা লন্ডন থিয়েটারের স্কেচের সিরিজ ,মন্টিভিদিয়োর প্রযোজনায় এল কুয়িদাদর–এর একটা পোস্টার , ছোট্ট ব্যালান্স শীট যা দেখাচ্ছে তাঁর প্রথম ওয়েস্ট এন্ড প্রযোজনার একেবারেই বাজে-চলা ‘দ্য বার্থডে পার্টি’ –র দুশো ষাট পাউন্ড ব্যবসা ;একটা পিকাসোর ড্রয়িং ; এবং তার শংসাপত্র যখন , শেষ বসন্তে ,তাঁর নাম এলো অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার-এ , ‘বীটলসের পরের বছর’ বলছিলেন তিনি ।

সাক্ষাৎকার-প্রার্থী
কখন শুরু করেছিলেন লেখা আর কেন ?

হ্যারল্ড পিন্টার
আমার প্রথম নাটক হোলো ‘দ্য রুম’, সাতাশ বছর বয়সে লিখেছিলাম হেনরি উলফ নামে আমার একজন বন্ধু ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য-বিভাগের ছাত্র ছিল , আর সে সময় এদেশে সেটাই ছিল একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে এরকম একটি বিভাগ ছিল ।সেইসূত্রে হেনরির একখানা নাটক পরিচালনা করার সুযোগ ছিল আর ওই আমার সবচেয়ে পুরনো বন্ধু যে আমার লেখালেখির ব্যাপারটা জানতো ।এটাও জানতো যে আমার একটা নাটকের ভাবনা মাথায় ঘুরছে যদিও সেটা তখনও লেখা হয়নি ।তখন রেপার্টারিতে অভিনয় করছি । আমায় বলল  ওর নির্ধারিত পাঠ্যসূচী-র জন্য একটি নাটক দরকার । বললাম , হাস্যকর , ওটা লিখতে ছয়মাস লাগবে ।কিন্তু  চারদিনের মধ্যে লিখে ফেললাম নাটকটা ।

সা-প্রা
লেখালেখি কি এতখানি সহজ আপনার কাছে ?

পিন্টার
ওয়েল,বহুবছর ধরে লিখছি তো , শতাধিক কবিতা আর অনেক ছোটো ছোট গদ্য , ডজনখানেক বিভিন্ন ছোটো পত্রিকায় ছাপাও হয়েছে , উপন্যাসও আছে : প্রকাশ করার মতো নয় অবশ্য ; দ্য রুম অভিনয় হয়নি বহুদিন , তারপর আমার দ্য বার্থডে পার্টি লেখা শুরু করি ।

সা-প্রা
কোন বিষয়টা আপনাকে এত দ্রুত পরের নাটকটা লেখার কথা ভাবালো ?

পিন্টার
নাটক লেখার পদ্ধতিটাই ।একদিন দ্য রুম-এর অভিনয় দেখতে গেলাম ।রিমার্কেবল অভিজ্ঞতা ।এর আগে যেহেতু কোনও নাটকই লিখিনি আমি সেজন্য আমার কোনও লেখা এভাবে পারফরমড হতেও দেখিনি , ওরকম অডিয়েন্সের সামনে ...যে ক’টা লোক আমার লেখালেখি জানতো ,সে তো আমার কয়েকজন বন্ধু আর আমার সহধর্মিনী ।ওই শ্রোতৃমণ্ডলীর মধ্যে বসে সারা সময়টায় পেচ্ছাব করার ইচ্ছা হচ্ছে ,যাইহোক শেষে আমি বাইসাইকেল স্ট্যান্ডের পিছনে ছিটকে এসে পড়লাম ।

সা-প্রা
অডিয়েন্সের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের ফলস্বরূপ আর কী কী পাওয়া গেল ?

পিন্টার
খুবই উৎসাহিত হয়েছিলাম ইউনিভার্সিটির দর্শকের প্রতিক্রিয়ায় , যদিও মতামত যেমনই হোক না কেন , দ্য বার্থডে পার্টি আমি লিখতামই ।কয়েকরজনী দেখার পর , যদিও আজ পর্যন্ত এরকম আরও কয়েকটা দেখছি , আর ভাল লাগছিলো না ।এ আর টানটান কোনও দর্শন-অভিজ্ঞতা ছিল না ।আর প্রশ্নটা নাটকটা কেমন চলেছিল অথবা দর্শককুলের রিএকসান কেমন সেটা নয় ,প্রশ্নটা আমার নিজের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ।আমি তো আসলে দর্শকদের শত্রুপক্ষ – আমি আসলে বিশালসংখ্যক লোকজনদের পাত্তাই দি না ।সবাই জানে , শ্রোতাকুল কেমন ব্যাপকভাবে পাল্টায় , ওদের কথা বেশি ভাবলে ভুলই হবে বরং ।যে জিনিষটা নিয়ে ভাবতে হবে সেটা হোল , যে ব্যাপারটা সে বলতে চেয়েছিল , সেটা সে এই পারফরমেন্সের মাধ্যমে বলতে পারল কীনা হ্যাঁ ,আমার নাটক কখনও কখনও সেটা পেরেছে

সা-প্রা
আপনি কি মনে করেন আপনার ব্রিস্টলের বন্ধুটির উৎসাহের ভরবেগ না থাকলে আপনি কখনও নাটক লিখতেন ?

পিন্টার
হ্যাঁ , আমার মনে হয় , লিখতাম ।দ্য রুম নাটকটি এমনিতেই লিখতাম ।পরিস্থিতির চাপে একটু দ্রুত লিখেছিলাম ,ঠিক ; সে হয়ত আমার মধ্যেকার আগুন উস্কে দিয়েছিল ।দ্য বার্থডে পার্টি -নাটকটিও মনে মনে ঘুরে বেড়াচ্ছিল কিছুকাল ধরে ।আমার মনে এটা স্পার্ক করে একেবারে আলাদা একটা ঘটনা থেকে ।তখন আমি ট্যুরে ।আসলে অন্য একদিন আমার এক ইয়ার একখানা চিঠি আমার হাতে দেয় যা নাকি আমি তাকে লিখেছিলাম ওই ঊনিশশো পঞ্চাশ-টঞ্চাশে , ভগবান জানে কখন । লেখা ছিল “ আমার সব নোংরা অসুস্থ খোঁচা , এক মাগির বিশাল মোটা ভেড়ার মতো ঘাড় যার মাইদুটো লাটাগুড়ি খাচ্ছে পেটের কাছে, একটা অশ্লীল ঘরকন্না , বেড়াল , কুকুর , নোংরা ,চা-ছাঁকনি ,এলোমেলো ,ওহ বলদগুলো ,কথা ,বাতচিৎ ,ফালতু দাগ  ,গু-বিষ ,ছেলেমিপনা ,উর্ধ্বমুখী নকশার কাজে অভাবী বিন্যাস , ফাকিং রোল অন ’’ এখন ব্যাপারটা হোলো এই যে ,ওইটাই  দ্য বার্থডে পার্টি –ওইরকম একটা অবস্থায় নিজেই ছিলাম আর এই মহিলাটিই হলেন নাটকের চরিত্রটি- ‘মেগ’এবং আরও একজন ছিল যে ইস্টবোর্ণে , সৈকতের উপরে থাকতো ।গোটা বিষয়টা আমার মধ্যে থেকে গিয়েছিলো এবং তিনবছর পর আমি নাটকটা লিখি ।



সা-প্রা
আপনার প্রতিনিধি-স্থানীয় কোনও চরিত্র এই নাটকে নেই কেন ?

পিন্টার
আমার নিজেকে নিয়ে সরাসরি কিছুই বলার মতো ছিলও না , এখনও নেই ।আমি জানিওনা কোথায় শুরু করতে হয় ।বিশেষত যখন আমি আয়নায় নিজের দিকে তাকাই , বলি : কোন মরা এটা ?

সা-প্রা
নিজেকে মঞ্চে যদি দেখতে পান তাহলে কি কোনোভাবে নিজেকে নিয়ে কথাগুলো খুঁজে পেতে পারেন ?

পিন্টার
না

সা-প্রা
আপনি কি নিজের সিচুয়েশন থেকে চরিত্রচিত্রণ করেন ? দ্য কেয়ারটেকার –নাটকটির কথাই যদি ধরা যায় , তাহলে-

পিন্টার
কয়েকজন ভবঘুরে সঙ্গে আমার আলাপ আছে –এমনি স্বাভাবিকভাবেই এর মধ্যে একজন ছিলতাকে খুব যে ভালো চিনতাম তা নয় ,তবে দেখা হলে সেই সবচেয়ে বেশি কথা বলতো আমার সঙ্গে ।ওর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রায়শই হোঁচট খেতাম । কাছাকাছি এক বছর ধরে ওর সঙ্গে কথা বলতে বলতে এই নাটকের ধারণাটা মাথায় খেলে যায় ।

সা-প্রা
দ্য রুম নাটকে অভিনয় করার ঘটনা ঘটেছিল নাকি ?

পিন্টার
না-না- অভিনয় সম্পূর্ণই আলাদা একটা অ্যাক্টিভিটি ১৯৫৮সালে যখন আমি দ্য রুম , দ্য বার্থডে পার্টি আর দ্য ডাম্ব ওয়েটর লিখছিলাম , তখন তো অভিনয়ও করে যাচ্ছি রেপার্টারিতে । সবই চলছিল , বোর্নমাউথ ,টার্কি আর বার্মিংহামে যাওয়া হয়েছে ।দ্য কেয়ারটেকার যখন শেষ করি তখন কোনও একটা , নামটা মনে নেই , ফার্স নিয়ে ট্যুর করছিলাম ।

সা-প্রা
অভিনেতা হিসাবে আপনি কি আপনার নাটকে অভিনয়ের ব্যাপারে কোনও বাধ্যবাধকতা রাখেন ?

পিন্টার
কখনও কখনও সেটা থাকে আর কখনও ভুল প্রমাণিতও হই ।

সা-প্রা
প্রত্যেকটি চরিত্রের মধ্যে কি নিজেকেই দেখতে পান যখন লেখেন ? অভিনয় কি নাট্যকারকে সাহায্য করে ?

পিন্টার
লেখার সময় আমি চেঁচিয়ে নিজেকেই পড়ে শোনাই , কিন্তু নিজেকে সব চরিত্রে দেখতে পাই না –বেশিরভাগ রোলে অভিনয়ও করতে পারব না এইসব সীমাবদ্ধতার জন্যেই আমার অভিনয় নাটক লেখাকে ব্যাহত করে না ।

সা-প্রা
আপনার স্ত্রী , ভিভিয়ান মার্চেন্ট ,প্রায়শই আপনার নাটকে অভিনয় করেন ? ওঁর জন্য কি পার্ট লেখেন ?

পিন্টার
না- আমি কখনও কোনও পার্ট নির্দিষ্ট কারোর জন্য লিখি নি আর এটা আমার বউয়ের ক্ষেত্রেও খাটে ।আমি শুধু মনে করি ও ভালো অভিনেত্রী  ,কাজের ক্ষেত্রে খুব ইন্টারেস্টিং আর আমি ওকে আমার নাটকে পেতে চাই ।

সা-প্রা
অভিনয় কি আপনার পেশা ছিল যখন প্রথম নাটক লিখলেন ?

পিন্টার
আরে অবশ্যই ,এটাই তো শুধু করেছি ।বিশ্ববিদ্যালয়ে যাইনি ,ষোল বছর বয়সে স্কুল ছেড়েছি –অশান্ত আর হয়রান হয়ে ।স্কুলে একমাত্র যে জিনিষটা আমাকে টানত সেটা ইংরাজি ভাষা আর সাহিত্য , কিন্তু ল্যাটিন ছিল না বলে ইউনিভার্সিটি যাওয়া হোল না ।আর তাই কয়েকটা নাটকের স্কুলে গেলাম ; সিরিয়াসলি পড়াশোনা করতাম না ।আসলে ওই ব্যাপারটার প্রেমে পড়েছিলাম আর ওতেই লেগে ছিলাম ।

সা-প্রা
নাটক লেখার ক্ষেত্রে নাট্য-বিদ্যালয়গুলির কোনও ভূমিকা ?

পিন্টার
একদমই নেই ..ও শুধু বেঁচে থাকা আর কি

সা-প্রা
যুবক বয়সে কি খুব নাটক দেখতেন ?

পিন্টার
না , খুব কম কেবল একজনেরই নাটক দেখতে ইচ্ছে হত -ডেভিড উলফিট । তখন একটা সেক্সপিয়র কম্পানিতে ছিলেন ।আমি সাংঘাতিক অ্যাডমায়ার করতাম ওঁকে;ওঁর লিয়র এখনও আমার দেখা সেরা ।আর তারপর বহু বছর ধরে আমি প্রচুর আধুনিক সাহিত্য পড়েছিলাম , সেটা বেশিরভাগই উপন্যাস ।

সা-প্রা
কোনও নাট্যকারকে পড়লেন না - ব্রেখট অথবা পিরান্দেল্লো ?

পিন্টার
না না - বহুবছর নয় ।হেমিংওয়ে , দস্তয়েভস্কি ,জয়েস ,হেনরি মিলার আর কাফকা ছিলেন কম বয়সে ব্রেখটের নভেলও পড়েছি ,কিন্তু প্রথম কয়েকটা নাটক লেখা হওয়ার আগে আমি ইওনেস্কোর নাম পর্যন্ত শুনি নি ।

সা-প্রা
এইসব লেখকদের কোনও প্রভাব আছে আপনার লেখায় ?

পিন্টার
যাঁদের পড়েছি ব্যক্তিগতভাবে সবার কাজে প্রভাবিত হয়েছি – আর সবসময়েই তো আমি পড়তাম –কিন্তু এইসব লেখকদের কেউ নির্দিষ্টভাবে আমায় প্রভাবিত করেন নি ।বেকেট আর কাফকা আমার সঙ্গে বহুদিন ছিলেন –আমার মনে হয় বেকেট জীবিতদের মধ্যে সেরা গদ্য লেখক । আমার জগত এছাড়াও অন্য সব লেখকদের লেখায় ভরা , এটাই সবচেয়ে সেরা জিনিষ ।

সা-প্রা
আপনি কি মনে করেন যে মিউজিক কোনোভাবে আপনার লেখাকে প্রভাবিত করেছে ?

পিন্টার
জানি না মিউজিক ঠিক কীভাবে লেখাকে প্রভাবিত করতে পারে ।কিন্তু ক্ল্যাসিক্যাল আর জ্যাজ আমার কাছে খুব গুরুত্ব পায় লেখায় একটা সাংগীতিক বোধ অনুভব করি যা প্রভাবিত হওয়ার ব্যাপার থেকে আলাদা ।বুলেজ আর ওয়েবার্ন তো এখনও শুনি -

সা-প্রা
থিয়েটারের লেখার সীমাবদ্ধতা কি আপনাকে অধৈর্য করে ?

পিন্টার
না এ ব্যাপারটা একটু আলাদা ; থিয়েটারের জন্য লেখা আমার কাছে সবচেয়ে কঠিন , সবচেয়ে নগ্ন , আর এখানে তো চারিদিকে ঘেরাটোপ ।কিছু ফিল্মের কাজও করেছি , কিন্তু কোনও কারনে নিজেকে স্যাটিসফাই করতে পারিনি ফিল্মের কোনও অরিজিনাল ধারনায় ।টি পার্টি– যেটা টেলিভিসনের জন্য করেছিলাম , সেটা আসলে তো একটা ফিল্ম , সিনেম্যাটিক ।ওইরকমভাবেই লিখেছিলাম ।টেলিভিসন আর ফিল্ম থিয়েটারের চেয়ে সহজ – যদি আপনি ক্লান্ত হয়ে যান কোনও দৃশ্যে ,সেটা জাস্ট রেখে দিন আর অন্য আর একটায় চলে যান ।(বাড়িয়ে বললাম অবশ্য)মঞ্চের যে ব্যাপারটা আলাদা সেটা হোল আপনি ওখানেই কিন্তু রয়েছেন – আপনার চরিত্রেরা ওই স্টেজেই আছে , আপনাকে ওদের সঙ্গে থাকতে হবে আর ওদের মোকাবিলাও করতে হবে ।টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমি অত নতুনত্ব আনতে পারি না , যা অন্যেরা পারেন –ব্রেখট দেখুন !আমি ওঁর মতো করে মঞ্চ দেখতে পারি না ।অত কল্পনাশক্তিও আমার নেই ।তাই আমার ওই চরিত্রগুলোর সঙ্গে আমি লেগে থাকি ,যারা বসে আছে , দাঁড়িয়ে আছে  আর ওদের হয় দরজা দিয়ে বেড়িয়ে যেতে হবে কিম্বা ভিতরে আসতে হবে – এটুকুই ।

সা-প্রা
আর বকবক করতে হবে

পিন্টার
অথবা নীরব থাকতে হবে

সা-প্রা
দ্য রুম-এর পরের প্রযোজনাগুলো আপনার লেখায় কোনও প্রভাব ফেলেছে ?

পিন্টার
দ্য বার্থডে পার্টি নাটকটি লন্ডনের হ্যামারস্মিথে দ্য লিরিক-এ মঞ্চস্থ করা হয়েছিল । নাটকটি প্রথমে অক্সফোর্ড আর কেমব্রিজে ছোট্ট একটা ট্যুর করে এবং প্রচুর সাফল্য পায় ।লন্ডনে আসার পর একে সমালোচকেরা সম্পূর্ণ নির্দয়ভাবে খুন ক’রে কচুকাটা করে ফেলেকে জানে কেন – জানার ইচ্ছেও নেই ।সপ্তাহখানেক চলেছিল।ওই যে দেয়ালে বাঁধিয়ে রেখেছি বক্স-অফিসের শংসাপত্র : দুই শত ষাট পাউন্ড , প্রথম রজনীর একশ চল্লিশ আর বেস্পতিবারের ম্যাটিনি শো-এ দু পাউন্ড নয় শিলিং –মাত্র ছয় জন লোক ছিল ।পেশাদারী থিয়েটারের জন্য লিখতে আসা আমি তখন একবারেই আনকোরা আর এই ঘটনা আমায় কাঁপিয়ে দিয়েছিলকিন্তু লেখালেখি আমি চালিয়ে যাই –বি বি সি কিন্তু খুব হেল্প করেছিল ।ওদের বরাতে লিখলাম আ স্লাইট এইক ।১৯৬০ সালে প্রযোজিত হোল দ্য ডাম্ব অয়েটর আর তারপর দ্য কেয়ারটেকার ।শুধু একটাই আমার খারাপ অভিজ্ঞতা – দ্য বার্থডে পার্টি । আমি এত আনাড়ি,মুখচোরা ছিলাম –এখনও যে খুব কনফিডেন্ট তা নয় , কিন্তু তুলনায় ...যাইহোক , স্টেজফেজের ব্যাপারে কীভাবে মানিয়ে নিতে হয় জানতাম না আর এও জানতাম না পরিচালকের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়

সা-প্রা
এই প্রতিকূলতার কোনও ফল হোল ?আপনার অভিনয়ের এই যে পক্ষপাতদুষ্ট সমালোচনা যা আপনি আগেও পেয়েছেন , সেটা কতখানি আলাদা ছিল?

পিন্টার
এটা ছিল খুব বড় একটা আঘাত ।প্রায় আটচল্লিশ ঘণ্টা ডিপ্রেশনের মধ্যে ছিলাম ।একমাত্র আমার স্ত্রীই শুধু বলেছিল “এরকম তো আগেও হয়েছে” ইত্যাদি ইত্যাদি ।কোনও সন্দেহ নেই যে ওঁর কমন সেন্স আর বাস্তববুদ্ধিই আমাকে সেই মানসিক অবস্থা থেকে বাঁচায় । ওইরকম আর কখনও হয় নি আমার ।

সা-প্রা
আপনি তো কিছু নাটক পরিচালনাও করেছেন । আরও করার ইচ্ছে আছে ?

পিন্টার
না –আমি ভেবে দেখেছি ওটা আমার ভুলই হয়েছিল ।আমি যতটা লিখি ,কাজ করি ততটাই ,একটা থেকে আরও একটার দিকে যাই এর পরে কী হয় দেখার জন্য ।কেউ সেটা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে ...আমি কিন্তু খুব কমই পেয়ে থাকি ।আমার মনে হয় একজন লেখক হিসাবেই আমি প্রাসঙ্গিক ...নির্দেশক হয়ে আমি অভিনেতাদের বাধা দিয়েছি ,কারন নাটকের পাঠ নিয়ে আমি যত নিরপেক্ষই হই আর ‘এইদেখ এখানে এটার অর্থ এই’ বলে অভিনেতাদের চাপ না দেওয়ার চেষ্টা করি , আমার মনে হয় একটা অবলিগেশন অভিনেতাদের উপর এসে যায় আর সেটা সহ্যের অতীত ।

সা-প্রা
যেহেতু আপনি অভিনেতা , কখনও কি এমন হয়েছে যে , কোনও একজন অভিনেতা এসে তাঁর কিছু লাইন অথবা চরিত্রের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিতে বলল ?

পিন্টার
কখনও , যদিও সেটা খুবই কম , লাইন পাল্টান হয় যখন আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করছি । আমি একদমই সেই নৈরাজ্যের থিয়েটারে বিশ্বাস করি না যেখানে তথাকথিত সৃষ্টিশীল অভিনেতারা থাকেন –সেসব অন্য কারোর নাটকে ওঁরা করতে পারেন ।তাতে একেবারেই ওঁদের ক্ষমতার হ্রাসবৃদ্ধি হবে না , যদি আমার নাটকে কাজ করেন ।

সা-প্রা
আপনার কোন নাটকটি আপনি প্রথম নির্দেশনা করেন ?

পিন্টার
আমি দ্য কালেকশন নাটকটিতে সহ-নির্দেশনায় ছিলাম আর দ্য লভার এবং দ্য ডুয়ার্ফ-এ নির্দেশনা দিয়েছিলাম একইসঙ্গে একই বিল-এ ,দ্য আর্টস-এ ।দ্য লভার খুব একটা সুযোগ পায়নি ,কারন আমারই সিদ্ধান্ত ,যা দেখে আপসোস করেছিল সবাই ,আমি ছাড়া । দ্য ডুয়ার্ফ একটা অবাধ্য ,একগুঁয়ে ধরনের কাজ , অসম্ভব একখানা কাজ ।আপাতভাবে একশ জনের মধ্যে নিরানব্বুই জন বলেছিল , ওটা সময় নষ্ট শুধু আর অডিয়েন্সের ঘৃণাই পেয়েছিলাম শুধু ।

সা-প্রা
খানিকটা কথায় আর খুবই কম অ্যাকশানের মধ্যে দিয়ে মনে হয় আপনার নাটকগুলো ঘনত্ব অর্জন করে ।এটা কি আপনার নতুন কোনও নিরীক্ষা ?

পিন্টার
না – আসলে ব্যাপারটা হোল দ্য ডুয়ার্ফ এসেছে আমার বহুদিন আগে লেখা একটি অপ্রকাশিত উপন্যাস থেকে ।লেখাটা থেকে আমি অনেক কিছুই নিয়েছিলাম , বিশেষত আমার চরিত্রেরা যেরকম মানসিক কাঠামোর মধ্যে ছিল সেটা ।

সা-প্রা
তাহলে এই কম্পজিশনটির পরিস্থিতি আর নতুন করে হবে না ?

পিন্টার
না । এর সঙ্গে যোগ করা উচিত যে ,আপনি যেমন বললেন , যত ঘনত্ব বাড়ে তত তার মূল্যও বেড়ে যায় ।আমার মত হোল যে ,সাধারণ প্রলাপ আর মনের অবস্থা ,প্রতিক্রিয়া আর নাটকের সম্পর্ক – যদিও সেটা অত্যন্ত বিরল –কিন্তু আমার কাছে স্পষ্ট । যে সব কথা বলা হয় নি সেগুলোও কিন্তু আমি জানি ,আর যেভাবে চরিত্রেরা একে অপরের দিকে তাকায় আর কী অর্থ হয় সেসবও আমার জানা আছে ।এটা প্রতারণা আর সন্দেহের নাটক ।আমার কাছে এ বেশ বিভ্রান্তিকর ,আর স্পষ্টতই সফল হতে পারে না ।কিন্তু কাজ করতে ভালো লেগেছিল ।  

সা-প্রা
একটি নাটক সফলভাবে নির্দেশনা দিতে গেলে একের  বেশি পদ্ধতি আপনার জানা আছে কি ?
পিন্টার
অবশ্যই ।কিন্তু সবসময় সেই এক কেন্দ্রীয় সত্যকে ঘিরে – যদি বিকৃত হয় ,তাহলে খারাপ ।ব্যাখ্যার বিভেদ আসে অভিনেতাদের দিক থেকে ।তবে ডিরেক্টরকে কিন্তু নাটকের ব্যার্থতার জন্যে অবশ্যই দায়ী করা যায় – জার্মানিতে দ্য কেয়ারটেকারের প্রথম প্রযোজনা কিন্তু খুব ভারি আর জমাট হয়ে গেছিল । কোনও নাটকের জন্য কিন্তু ব্লু প্রিন্ট দেওয়া যেতে পারে না আর অনেকেই খুব সফলভাবে আমার সাহায্য ছাড়াই এই কাজ করে গেছেন ।

সা-প্রা
যেহেতু আপনি এই ধরণের কাজ করেছেন , তাই জানার ইচ্ছে হয় ,একজন ভালো নির্দেশকের সঙ্গে ভালো নাট্যকারের রসায়ন কীরকম ?

পিন্টার
যেটা সবচেয়ে জরুরী সেটা হোল লেখক আর ডিরেক্টরের দুজনেই রক্ষণাত্মক হবেন না ।এটা তো একটা পারস্পরিক বিশ্বাস আর ওপেননেসের ব্যাপার ।আর সেটা না থাকলে ,একেবারে সময়ের অপচয় ।


সা-প্রা
পিটার হল , যিনি আপনার বেশির ভাগ নাটক নির্দেশনা করেছেন , বলেন যে আপনার ক্রিয়াপদের উপরে তাঁদের আস্থা আছে আর যখন আপনি ‘পজ’ কথাটা লেখেন ,তার মানে কিন্তু নীরবতা নয় , অন্য কিছু হতে পারে এবং তিনখানা ডটের অর্থ পূর্ণচ্ছেদ নয় ,আলাদা কোনও কিছু ।এসব কি আপনাদের একসঙ্গে কাজ করার ফল ?

পিন্টার
ঠিক তাই ।আপনি যে পয়েন্টগুলো উল্লেখ করলেন , সেগুলকে আমি খুব গুরুত্ব দিই ।দ্য হোমকামিং করার সময় একদিন পিটার অভিনেতাদের ওই ডট আর পজ-এর রিহার্সাল করিয়েছিল ।শুনতে ভণ্ডামি মনে হলেও এগুলো কিন্তু খুবই মূল্যবান বিষয় ।

সা-প্রা
লেখার আগে কি আপনি নাটকের আউটলাইন বানিয়ে নেন ?

পিন্টার
একেবারেই না ।আমি জানতেই পারি না কী ধরণের চরিত্রেরা আমার নাটকে আসবে যতক্ষণ না ...ওয়েল , ওরা আসে।যতক্ষণ না ওরা ইঙ্গিত করে ওরা নিজেরা কেমন ।কোনোভাবেই আমি ওদের কনসেপচুয়ালাইজ করি না ।একবার ক্লু-টা পেয়ে গেলেই আমি সেটা ফলো করতে থাকি –ওটাই আমার কাজ । ক্লু-গুলো ফলো করে যাওয়া ।

সা-প্রা
ক্লু বলতে আপনি কি বোঝাচ্ছেন ? মনে করতে পারেন কীভাবে আপনি একটা নাটক গড়ে তুলছেন – সেটা কি লাইন-বাই-লাইন এগোন ?

পিন্টার
অবশ্যই আমি মনে আনতে পারছি না কীভাবে একটা নাটক আমার মধ্যে গড়ে তুলিমনে হয় উত্তেজনা আর হতাশার একটা উচ্চপর্যায়ে লিখতে শুরু করি ।সামনের সাদা কাগজে যেটা দেখতে পাই সেটাই ফলো করে যাই –এক বাক্য থেকে অন্য বাক্যে ।তার মানে কিন্তু এ নয় যে আমার সম্ভাবনাময় কোনও অস্পষ্ট ধারণাও নেই –যে প্রতিমা দিয়ে শুরু করি সেটা কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে যেটা আসছে তাকে বিপদে ফেলে দেয় না ।একটা ওভার-অল ঘটনা যা আমাকে পুরোটা ক্যারি করে তাকে সমস্যায় ফেলে দেয় ।কখনও কখনও চলতে চলতে দেখি লিখছি “গ ভিতরে এলেন ’’ যখন আমি আদৌ জানি না তিনি সত্যিই ভিতরে আসবেন ; তখন , সেই মুহূর্তে তাকে আসতে হবে – এই পর্যন্তই ।

সা-প্রা
দ্য হোমকামিং-এ স্যাম নামে চরিত্রটি কিছুক্ষণের জন্য সক্রিয় থাকে না । তারপর হঠাৎ চিৎকার করে নাটক শেষের কিছুক্ষণ আগে আকস্মিকভাবে স্তব্ধ হয়ে যায় । এটাই কি বোঝাতে চাইছেন ? একটু অ্যাবরাপ্ট লাগে ।

পিন্টার
হঠাৎ ওটাই আমার ঠিক বলে মনে হয়েছিল । ওইরকমভাবেই জাস্ট এসেছিল ।জানি ,ওকে কিছু কথা বলতে হোতো এক সময় ।এটাই ।

সা-প্রা
তাহলে চরিত্রেরা আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে , আপনার লেখার ধারণা পাল্টে দিয়ে – এমনকি যদি সেটা ফালতুও হয় ?

পিন্টার
আলটিমেটলি আমিই কিন্তু দড়িটা ধরে থাকি ,সে জন্য ওরা খুব বেশি দূর যেতে পারে না

সা-প্রা
আপনি কি বুঝতে পারেন কখন পর্দা নামিয়ে দেবেন অথবা আপনি কি সচেতনভাবে কোনও একটা মুহূর্তের দিকে , যা আগে থেকেই ঠিক করা আছে , লেখাটিকে নিয়ে যান ?

পিন্টার
এ নিখাদ সহজাত ব্যাপার । সঠিক ছন্দময় হলেই পর্দা নেমে আসে – ঠিক যখন ঘটনাক্রম ঘটনাক্রমের অবসান দাবি করে । আমি পর্দার দড়ি খুবই পছন্দ করি ,আর সেটা সঠিকভাবে নামাতেও চাই ।

সা-প্রা
সেজন্যই আপনি কি মনে করেন আপনার নাটকেরা কাঠামোর দিক থেকে সফল ? আপনি সহজাত ব্যাপারটা কমিউনিকেট করতে পারছেন নাটকে ছন্দের জন্য ?


পিন্টার
না ঠিক তা নয় ।কিন্তু আমার চিন্তার বিষয় সেটাই ।কাঠামোটা ঠিকঠাক রাখা ।আমি তিনখানা খসড়া করি প্রথমে কিন্তু একটা সময় সেটা তো ছেড়ে দিতে হবে আপনাকে ।একটা সময় আসবেই যখন আপনি বলবেন – একদম , এটাই ।এর থেকে বেশি কিছু করব না ।একটা নাটক যেটা কাঠামোগত ভাবে আমায় খুশি করে সেটা হল দ্য হোমকামিং । দ্য বার্থডে পার্টি  আর দ্য কেয়ারটেকার-এ একটু বেশিই লেখা হএছে বরং ।ওগুলোকে চেপে দিতে চাই , কিছু জিনিষ বাদ যাবে ।খুব বেশি বকবক করা হলে বিরক্ত লাগে আমার , কিন্তু করার তো কিছু নেই , ওরা অভাবেই এসে গেছে ,কোনও মানুষের মুখ থেকে ।নিজের কাজ খুব একটা পরীক্ষা করি না  , তবে আমার লেখার এই একটা ব্যাপারে আমি সচেতন যে ,কোনও কোনও ছোঁড়া কখনও কখনও খুব বেশি বকে ।

সা-প্রা
বেশিরভাগ মানুষই একমত হবেন এই ব্যাপারে যে , আপনার নাটকের প্রধান স্ট্রং পয়েন্ট হোল কথনের ব্যাপারটাই , নকশাগুলো আর সেখান থেকে চরিত্রেরা যে শক্তি অর্জন করে , সেটা ।আপনি কি লকপজনের কথাবার্তা থেকে এগুলো পান – আড়ি পাতেন নাকি ?

পিন্টার
সেভাবে শনার মতো সময় ব্যয় করতে পারিনা ।ঘটনাক্রমে সবার মতো আমিও হাঁটতে হাঁটতে কখনও শুনে থাকি ।কিন্তু শব্দগুল তখনই আসে যখন চরিত্রদের লিখছি , আগে নয় ।

সা-প্রা
কেন মনে করেন আপনার নাটকে কথপকথন এতো জরুরী ?

পিন্টার
জানি না । মনে হয় মানুষ কিছু বিষয় নিয়ে পরে থাকে কারন ভাষাগতভাবে
ওরা কিছু একটা ছুঁয়ে থাকতে চায় ।জানার অথবা পরিচিত হবার বিপদ থেকে নিজেদের দূরে রাখার জন্য ।

সা-প্রা
নাটকের কোন জায়গাটা লেখার সময় আপনি সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন ?

পিন্টার
ওগুলোর এতখানি অবিচ্ছেদ্যভাবে অন্তর্বয়ন রয়েছে আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা

সা-প্রা
কিছুদিন আগে এনকাউন্টার পত্রিকা শিল্পকলার মানুষজনের থেকে কিছু উদ্ধৃতি নিয়েছিল ।বিষয়টা ছিল ব্রিটেনের সাধারন বাজার যোগদানের ব্যাপার ।সবচেয়ে ছোটো বক্তব্য আপনারই ছিল : এই বিষয়ে আমার কোনও আগ্রহ নেই আর কি এল গেলে তাতে আমার কিছুই এসে যায় না ।রাজনীতি অথবা কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স কি এটুকুই বলবেন ?

পিন্টার
না ঠিক তা নয় । যদিও ওটাই আমি মনে করি –আর আমি একেবারেই কমন মার্কেট নিয়ে ডোন্ট কেয়ার ।কিন্তু এটা খানিকটা সত্যি যে , যে  কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স নিয়ে আমি যেকোনোভাবেই আমি উদাসীন ।সাধারনত , এসব ব্যাপারে আমি  বিভ্রান্ত ,উত্তেজিত আর অসহিস্নু , অনিশ্চিত , কখনও উদাসীন ।চেষ্টা করি যা আমি করতে পারি সেটা , আর বাকিটা ছেড়ে দিই । আমার মনে হয় না আমার খুব মূল্যবান কোনও সামাজিক দ্বায়িত্ব আছে আর রাজনৈতিক ব্যাপারে ইনভলভড হবার প্রশ্নই ওঠে না কারন সেসব বিষয় কোনওভাবেই সহজ নয় – রাজনীতির লোক হলে আপনাকে যেকোনো একটা জিনিষ খুব সরলভাবে তুলে ধরতে হবে – এমনকী বিষয়টা সহজ না হলেও।
সা-প্রা
কখনও কি আপনার চরিত্রদের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক মতামত রেখেছেন ?

পিন্টার
না , শেষমেশ পলিটিক্স আমায় বোর করে যদিও আমি এটা বুঝি যে তারা অনেক যন্ত্রণার জন্যেই দায়ি ।যেকোনো আদর্শবাদকেই আমি একটু সন্দেহের চোখে দেখি ।

সা-প্রা
কিন্তু আপনি কি মনে করেন যে ব্যাক্তিগত হুমকির ছবি যা আপনার মঞ্চে উপস্থাপিত হয় সেটা , একটু বৃহৎ দৃষ্টিভঙ্গিতে ,রাজনৈতিক বোধকেই সমস্যায় ফেলে ? নাকি তার কোনও রিলিভ্যান্সই নেই ?

পিন্টার
আমি নিজে কখনই কোনও রাজনৈতিক সংগঠন বা ক্রিয়ার হুমকি অনুভব করিনি ।ইংল্যান্ডে বাস করতে ভালবাসি ।ওসব রাজনৈতিক কাঠামো থোড়াই কেয়ার করি –ভয়ও পাই না , কিন্তু ওরা লক্ষ লক্ষ মানুষের সমূহ যন্ত্রণার কারন 
আমি আপনাকে বলব আমি রাজনীতিক ব্যাক্তিত্বদের সত্যিই কী মনে করি ।ভিয়েতনাম নিয়ে দেখছিলাম কিছু পলিটিসিয়ান টিভি-তে একটা অনুষ্ঠানে কথা বলছেন ।আমি ফেটে পড়তে চাইছিলাম স্ক্রিনের ভিতরের দিকে, একটা জ্বলন্ত শিখা নিয়ে ওঁদের চোখ পুড়িয়ে ,মনিবন্ধ বেড় করে নিয়ে তারপর জিজ্ঞেস করার ইচ্ছে হচ্ছিল এই ঘটনাটিকে ওরা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কেমনভাবে দেখছেন ।

সা-প্রা
এই রাগ কখনও কোনও রাজনৈতিক নাটকে ব্যবহার করেছেন ?

পিন্টার
কখনও ঘটনাক্রমে ,উত্তেজনাবশত , ভাবি বিদ্রুপাত্মক নাটক লিখব ।একবার লিখেওছিলাম একটা নাটক – অনেকেই জানেন না সেটা ।দ্য কেয়ারটেকার-এর পরেই একটা পূর্ণদৈর্ঘের নাটক ।তিনখানা খসড়াতেই লিখে ফেলেছিলাম ।নাম দিয়েছিলাম দ্য হটহাউস আর সেটা ছিল একটা প্রতিষ্ঠান নিয়ে যেখানে রোগীদের রাখা হয় ।যেটা দেখানো হয়েছিল সেতা হোল একটা শৃঙ্খলা , যার প্রতিষ্ঠানটাকে চালাতো, একু কিন্তু জানতে পারত না ওই রোগীগুলোর কী হোতো অথবা কীজন্যে ওরা সেখানে আসতো অথবা ওরা আসলে কারা ।ওটায় বেশ তীব্র বিদ্রূপ ছিল ,অপ্রয়োজনেই খানিকটা । ওইসব চরিত্রদেরাম্র কখনই ভালো লাগেনি ; ওরকম নেই বললেই চলে ।তাই ওই নাটকটায় আমি আর উৎসাহ পাইনি ।সচেতনভাবেই –কেবল একবার- একটা ব্যাপারই মনে হয়েছিল যে এর খুব নোংরা মানুষ এবং আমি এদেরকে অ্যাপ্রুভ করি না ।আর তাই ওরা আর বাঁচতে পারেনি ।আবার আমার অন্যান্য নাটকে এমনকী দ্য বার্থডে পার্টি-তে গোল্ডবার্গের মতো বাস্টার্ডকেও আমি যত্ন করেছি

সা-প্রা
কখনও কখনও ।আপনি আপনার চরিত্রদের কথা এমনভাবে বলেন যে তার যেন জীবিত ব্যাক্তি ।লেখার পরেও কি এমনভাবেই তারা আপনার কাছে আসে ? যখন লিখছেন তখন ?

পিন্টার
দুরকমভাবেই

সা-প্রা
একেবারে আপনার জানাশোনা মানুষদের মতো ?

পিন্টার
না ,আলাদাভাবে আমি একবার একটা বীভৎস স্বপ্ন দেখেছিলাম।সেই দুই ভাইকে নিয়ে দ্য কেয়ারটেকার লেখবার পরে ।স্বপ্নে আমার বাড়িতে আগুন লেগে গিয়েছিল আর জানবার চেষ্টা করেছিলাম যে কে এর জন্য দায়ি ।আমাকে ঘুরিয়ে বেড়াচ্ছিল অলিগলি ,কাফে ; আর ঘটনাক্রমে কোনও একটা জায়গার ভিতরের ঘরে ধুকে পড়েছিলাম আর সেখানে দেখি নাটকের সেই দুই ভাইও উপস্থিত  আমি বললাম , তাহলে আপনারাই আমার ঘরে আগুন দিয়েছেন ? ওরা বলল, চিন্তার কোনও কারন নেই ।বললাম, ওখানে আমার সব ,সবকিছু রয়েছে ।আপনারা বুঝতে পারছেন না কী করেছেন , ওরা বলল ঠিক আছে , আমরা এর জন্য ক্ষতিপূরণ দেব আমরা আপনার দেখাশোনা করব ,ছোটো ভাইটা কথা বলছিল –আর তারপর আমি নিজে তাকে একটা চেক লিখে দিলাম ।আমিই ওদের একটা চেক দিলাম ।

সা-প্রা
মনস্ত্বত্তে আপনার আগ্রহ আছে ?

পিন্টার
না

সা-প্রা
একেবারেই না? আপনার কি কোনও উদ্দেশ্য আছে যখন দ্য কেয়ারটেকার-এর দুই নম্বর অংকে বড়ো ভাইটি একটি মানসিক হাসপাতালে তার সমস্যার কথা বলছে ?

পিন্টার
আচ্ছা , আমার একটা উদ্দেশ্য আছে ।অ্যাস্টন যখন হঠাৎই তার মুখ খুলল , আমার ইচ্ছে ছিল ওকে বলতে দেওয়া যতক্ষণ না ওর বলা শেষ হচ্ছে আর তারপর ...পর্দা নামিয়ে দেওয়া ।আমার হাতে তো কুড়ুল-টুড়ুল নেই আর এমন উপসংহার টানা ভুল হবে যে ,অ্যাস্টন তার অভিজ্ঞতার কথা যা যা বলছে সেগুলো সব সত্যি ।  


সা-প্রা
আপনার নাটকে আতঙ্ক আর হিংস্রতার আবহ রয়েছে ।আপনি কি পৃথিবীটাকে হিংস্রতার স্থান বলে মনে করেন ?

পিন্টার
এই পৃথিবী মোটামুটি ভায়লেন্সেরি জায়গা , এতটাই সহজ ,তাই যেকোনো ভায়োলেন্স খুব স্বাভাবিকভাবেই নাটকে চলে আসে । আমার কাছে এ তো গুরুত্বপূর্ণ এবং অনিবার্য ।
আমার মনে হয় আপনি যা বলছেন সেটা শুরু হয়েছিল দ্য ডাম্ব ওয়েটর-এ যেটা কীনা আমার দৃষ্টিকোণ থেকে আপেক্ষিকভাবে সরল নাটক হিংস্রতা তো শুধুমাত্র আধিপত্য আর নির্ভরতার ধারণামাত্র আর সেটাই আমার নাটকেও ঘুরেফিরে আসে ।বেশ কিছুদিন আগে একটা ছোটোগল্প লিখেছিলাম , দি একজামিনেশন । আর আমার ভায়লেন্সের ধারনা এখান থেকে শুরু হতে থাকে ।সেই ছোটোগল্পটি খুব সবিস্তারে বর্ণনা করে দুটো মানুষ-কে যারা একখানা ঘরে অজানা একটা বিষয় নিয়ে লড়াই করছে । প্রশ্নটা হোল ওদের মধ্যে কার কোন জায়গায় আধিপত্য ছিল , কীভাবে তারা আধিপত্য দেখাতে পারবে আর কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে ওরা আধিপত্য অর্জন করবে এবং কীভাবে অন্যের আধিপত্যকে নীচু করে দেখাবেএকটা আতঙ্ক কিন্তু সবসময় রয়েছে : প্রশ্নটা হোল কে সবচেয়ে উপরের দিকে থাকবেন অথবা কে থাকার চেষ্টা করবেন ।এই বিষয়টিই আমাকে দ্য সারভেন্ট বলে স্ক্রিনপ্লে-টি যা অন্য একজনের লেখা গল্প ছিল , সেটা লিখতে সাহায্য করেছে ।  আমি এই ভায়লেন্স-কে খুব একটা বেশি বলব না কারন এটা পজিশানের লড়াই ; খুব সাধারণ ,দৈনন্দিন ব্যাপার ।


সা-প্রা
এটা কি আপনাকে কোনও প্যাসিফিজমের দিকে নিয়ে যায় ?


পিন্টার
যখন যুদ্ধ শেষ হয় ,আমার তখন পনের বছর বয়স ।তিন বছর পরে যখন আমাকে মিলিটারি সার্ভিসের জন্য ডাকা হল ,তখন যাওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠেনি : আমি আমলই দিই নি ব্যাপারটাকে ।যেতে অস্বীকারও করেছিলাম ।তাই আমাকে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য একটা পুলিশের গাড়িতে নিয়া যাওয়া হল ।তারপর দুখানা আদালত , দুখানা বিচারসভা – কিন্তু হয়েছিল কী জেলাসমাহর্তা একটুখানি সহমর্মী ছিলেন ,সেজন্য আমার মট তিরিশ পাউন্ড জরিমানা হোল ।হয়ত পরের যুদ্ধে আমাকে ফের ডাকা হবে ,কিন্তু আমি যাব না ।


সা-প্রা
আধুনিক নাটক সম্মন্ধে রবার্ট ব্রাস্টেইন বলেছেন : ‘শুধুমাত্র নিজের বিশ্বাস পাল্টে ফেলে বিদ্রোহী নাট্যকার হয়ে যান একজন সাধারণ ধর্মপ্রচারক’নিজেকেও কি এরকম রোলে দেখেন ?

পিন্টার
আমি জানিনা উনি কী ব্যাপারে কথা বলছেন ।জানিনা কোন বিশ্বাস পাল্টে ফেলার কথা বলছেন


সা-প্রা
থিয়েটার বেশ প্রতিযোগিতার জায়গা ।লেখক হিসাবে অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার ব্যাপারটিতে আপনি কি সচেতন ?

পিন্টার
ভাল লেখা আমায় আলোড়িত করে আর এই জীবনকে বেঁচে থাকার সঠিক মূল্য দেয় ।আমি কখনই অন্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার ব্যাপার-স্যাপার জানিনা ।


সা-প্রা
আপনার সম্পর্কে লেখালেখিগুলো আপনি কি পড়েন ?

পিন্টার
হ্যাঁ বেশিরভাগই বুঝতে পারিনা ঠিক কী বলছেন ।সত্যি সবটা পড়েও দেখিনা আমি ।অথবা পড়ি আর ব্যাস – আপনি যদি জিজ্ঞেস করেন কী বলা হয়েছে , খুব কমই বলতে পারব ।অবশ্য ব্যাতিক্রম আছে ,প্রধানত যারা অপেশাদার সমালোচক ।

সা-প্রা
দর্শক সম্মন্ধে আপনি কতখানি সজাগ যখন লেখেন ?

পিন্টার
খুব বেশি নয় ।কিন্তু এইটা মনে থাকে যে এটা একটা গনমাধ্যম ।দর্শকদের বিরক্ত করতে চাইনা ।যা ঘটে সেটা দিয়ে তাদেরকে জ্যোতিময় করে তুলতে চাই ।তাই যতটা সম্ভব নিখুঁত লেখার চেষ্টা করি ।দর্শক থাকুক অথবা না থাকুক এটা আমি করেই যাই ।

সা-প্রা
দ্য থিয়েটার অব রিভল্ট-এ ব্রাস্টেইন উল্লেখ করেছেন , একবার ইউনেস্ক-র জেনে’র দি ব্ল্যাক দেখতে গিয়ে হল ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন কারন তাঁর মনে হয়েছিল যে তাঁকেই আক্রমণ করা হচ্ছে আর অভিনেতারা সেটা এনজয় করছেন আপনি কি মনে করেন যে একই রকম অভিজ্ঞতা আপনার দর্শকেরও হতে পারে ?আপনি নিজেও কি কখনও এভাবে রিঅ্যাক্ট করবেন ?

পিন্টার
আমার ওইরকম হয়েছিল – এইরকমই আমার সঙ্গেও একটি ঘটনা ঘটে এখানে ,লন্ডনে যখন আমি আমেরিকার রয়াল সেক্সপিয়র কম্পানির ভিয়েতনাম-যুদ্ধ-বিরোধী নাটক দেখতে গিয়েছিলাম ।সেখানে ওইরকম ধরনের আক্রমন হয়েছিল – আমি কখনও প্রচারের শিকার হতে চাই না আর অতিপ্রচারধর্মী খ্যাতি ঘৃণা করি ।আমি আমার নাটকে স্পস্টভাবে ব্যাপারগুলো উপস্থাপন করতে চাই  আর কখনও কখনও এটাই দর্শককে অস্বস্তিতে ফেলে দেয় , কিন্তু আক্রমনের কোনও উদ্দেশ্যই থাকেনা ।

সা-প্রা
সেজন্য আপনি কি মনে করেন যে নাটকটি তার উদ্দেশ্যসিদ্ধিতে ব্যর্থ –প্রতিপক্ষকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করা ?

পিন্টার
অবশ্যই ।জুদ্ধ-পরিস্থিতি আর ইউ এস যেটা মঞ্চে উপস্থাপিত করেছে তার ফাঁক এতখানি যে সেটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ।যদি শুধু বক্তৃতা দেওয়ার ব্যাপার অথবা দর্শক্কে চমকে দেওয়ার ব্যাপার হোতো ,তাহলে খানিকটা দুঃসাহসী হোতো ।কিন্তু ওইরকম একটা ব্যাপারে কোনও প্রধান নাটকীয় বক্তব্য পেশ করা অসম্ভব যখন সংবাদমাধ্যম আর টিভি সবকিছু স্পস্ট করে দিয়েছে ।

সা-প্রা
সচেতনভাবেই কি সংকটময় অবস্থাগুলো হাস্যরসিকতায় ভরে তোলেন ?কখনও দর্শক যখন বুঝতে পারে প্রসঙ্গটি , সে ভাবে ,যে তার হাসি নিজের দিকেই ঘুরে যাচ্ছে ।

পিন্টার
হাঁ । সেটা ঠিক ।একদম ঠিক ।আমি খুব কমই হিউমার লিখেছি , কিন্তু কিছু বিশেষ বিন্দু আছে ,যেটা মনে পরে গেলে আমারও হাসি পায় ।এটাও মানছি  যে ,বেশির ভাগ সময়েই কথাই কেবল হাসি উদ্রেক করে – সেই মানুষটা যাকে নিয়ে এইসব করা হচ্ছে সে হয়ত নিজের জীবনের যুদ্ধ করছে ।

সা-প্রা
নাটকের কোনও কোনও সংকট-অবস্থায় একটা অন্তর্লীন যৌনতা লক্ষ্য করা যায় ।তাই না ? থিয়েটারে যৌনতার ব্যবহারের ব্যাপারটিকে কীভাবে দেখেন ?

পিন্টার
আমি শুধু যৌনতার একটি ব্যাপারে আপত্তি করে থাকি : সাধারণ ব্যবসা করার জন্যে কিছু ‘খোলা মনের’ মানুষ অশ্লীল ভাষা শুরু করেন –এটা ।এটা তো অপরাধজগতের ভাষা হওয়া উচিত ।আর খুব কমই এমন শব্দ আছে ।এগুলো আমাদের বেশি ব্যবহার করে মেরে ফেলা উচিত নয় ।আমি আমার নাটকে এক-দুবারই এরকম শব্দ ব্যবহার করেছিলাম ,কিন্তু লর্ড চেম্বারলেইন-এ সেগুলো অনুমতি পায়নি ।ওই শব্দগুলো অসাধারণ আর আশ্চর্য সব শব্দ , কিন্তু একটু দেখেশুনে ব্যবহার করা উচিত ।ভাষা ব্যবহারের স্বাধীনতা , তার প্রচার আমাকে ক্লান্ত করে , কারন কিছু বলা তো হয় না ,তার চেয়ে এসব দিয়ে কিছু দেখানটা হয় ।

সা-প্রা
আপনার লেখা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কেউ অনুকরণ করেছেন ? কখনও , কোনও ফিল্মে অথবা থিয়েটারে গিয়ে কি মনে হয়েছে যে ,আরে এটা যে ‘পিন্টারেস্ক’ ?

পিন্টার
ওই শব্দটা ! এই শব্দগুলো আর বিশেষত ওই শব্দটা ‘পিন্টারেস্ক’ –আসলে এদের অর্থ কী তা আমার জানা নেই !এইসব ব্যাপার বয়ে বেড়ানো আমার আর অন্য লেখকদের কাছে বিরাট বোঝা ।খুব কমই আমি কোনও কিছু শুনতে গিয়ে ভেবেছি ।হ্যালো –একটা বেল বেজে উঠল ।ব্যাস ওটা ওর থেকে আর বেশিদূর যায় না ।আমি সত্যিই মনে করি যে লেখকেরা লিখে যান , শুধু লিখে যান এবং এটা বিশ্বাস করতে আমার কষ্ট হয় যে আমার কোনও প্রভাব আছে এদের উপর ।খুব কমই তার প্রমাণ পেয়েছি । লোকে হয়ত আমার চেয়ে এইসব প্রামান্য বিষয় বেশিই দেখতে পায় ।

সা-প্রা
আর সমালচকেরা ?

পিন্টার
ওদের নিয়ে ভাবাই ভুল। আপনি দেখছেন তো , যে এই সময়কাল কী অতি-প্রচারের আর অতিরিক্ত অবনমনেরও । লিখতে পারি তাই ভালো লেখকের কাছে আমি নিদর্শনস্বরূপ , কিন্তু আপনি যা যা বললেন সেসব কিছু নয় ।আমি শুধু একজন লেখক আর আমার মনে আমাকে বরং একটু বেশিই প্রচার দেওয়া হয়েছে ।কারন ভালো লেখকের অভাব ।কারন ভালো লেখার অভাব ।আর লোকে এসব নিয়ে নিজেদের ডাল-রুটি কামাচ্ছে বেশ যেটা করা উচিত সেটা হোল যতটা সম্ভব লিখে যাওয়া ।

সা-প্রা
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরেও আপনার নাটক অভিনীত হবে ? বিশ্বজনীনতা চান আপনি ?

পিন্টার
অ-ব্যাপারে কোনও ধারণাই নেই আমার কাছে এসবের কোনও মূল্যই নেই ।শুধু এটা দেখে ভাল লাগে যে আমার নাটক দক্ষিন আমেরিকা অথবা ইয়ুগস্লাভিয়ায় গুরুত্ব পায় –ভালো লাগে সেটা ।কিন্তু বিশ্বজনীনতার কোনও আগ্রহ আমার নেই –আমার শুধু একটি নাটক লেখার জন্যে এখনও যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে ।

সা-প্রা
সফলতা আপনার লেখা-কে পাল্টে দিতে পেরেছে ?

পিন্টার
না –আরও কঠিন করেছে ।এখন মনে হয় কিছুর বাইরে চলে এসেছি ।১৯৫৭ সালে যখন প্রথম নাটকটা লিখলাম , শুধু লেখার জন্যেই তো লিখলাম ; নাটক-প্রদর্শনের বিশাল জগত খানিকটা দূরেই ছিল – জানতাম যে এসব কোনোদিনই রেপার্টারি-তে , যেখানে আমি কাজ করছিলাম , সেখানে দেখানো হবেনা ।আর চাঁদের ওইদিকে ছিল লন্ডন এবং ওয়েস্ট এন্ড ।ফলে আমি সম্পূর্ণই অসচতনভাবে নাটকগুলো লিখছিলাম ।কোনও প্রশ্নই নেই যে তারপরের বছরগুলিতে লেখার জন্যে যে স্বাধীনতা দরকার ছিলও সেটা ছিল না ।কিন্তু আমি যখন লিখছি তখন কিন্তু ছিল। কিছুদিন প্রচার এড়ানোও বেশ কঠিন ছিল ,মঞ্চের জন্য একখানা নাটক লিখতে পাঁচটি বছর সময়  লেগেছিল আমার । দ্য কেয়ারটেকার-এর পরে দ্য হোমকামিং । এই সময়টায় নাটক লেখা ছাড়াও অন্য অনেক কিছু করেছি , কিন্তু নাটকটাই আমি লিখতে চাইতাম , পারতাম না ।তারপরে দ্য হোমকামিং লেখার পরে ভালো মন্দ জানিনা একটু আরাম পেলাম । আবার এখন অন্য একটা নৌকায় চেপে বসেছি – একটা নাটক লিখতে চাই আর সেটা সবসময় মাথার মধ্যে ভনভন করে ।কাগজে আমার আর কলমসংযোগ হয় না ।একটা মানুষের নিজেকে নিয়ে যে সাংঘাতিক একঘেয়েমি আছে –এটা লোকে বুঝতে চায় না । আর শুধু ওই শব্দগুলোকে কাগজে আনবার জন্য ,হে ভগবান ,যাই করি সবই হতাশা , অসন্তোষ আর পূর্বকথিত মনে হয় । বিচ্যুতি আমার কাছে কোনও প্রশ্নই নয় – আমার যদি লেখার মতো কিছু থাকত , লিখে ফেলতাম ।আর জিজ্ঞেস করেন না যে শুধুমাত্র নাটক নিয়েই কেন আমি এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবি ।

সা-প্রা
নতুন লেখার জন্যে কি আপনি  ফ্রি টেকনিক ব্যবহার করবেন ?

পিন্টার
ওসব তো অন্যের লেখা নাটকে উপভোগ করি । মারাট/সাদ নাটকগুলি ভালো সন্ধ্যে দিয়েছিল ,অন্য আলাদা ধরণের নাটকগুলির মধ্যে ‘দ্য ককেশিয়ান চক সারকল’ ভালো লেগেছিল ।কিন্তু ওরকম টেকনিক আমি নিজে কখনই ব্যবহার করিনি ।


সা-প্রা
এই ব্যাপারগুলি থেকে কি আপনার মনে হয় আপনি সময়ের চেয়ে পিছিয়ে গেছেন ?

পিন্টার
নাটক লেখার ক্ষেত্রে আমি সনাতন লেখালেখির পথিক – উদাহরনস্বরূপ আমার সব নাটকেই পর্দা থাকুক এই ব্যাপারটায় আমি জোর দিয়ে থাকি , সেকারনেই অভূতপূর্ব শেষবাক্য (কার্টেন লাইন)লিখি পিটার হল অথবা ক্লদ রেজি’র মতো নির্দেশক যখন ওসব ছাড়াই করতে পারেন , আমিও এই ব্যাপারগুলোর উপরে জোর দিই ।আমি সব কিছুকেই একটা নির্দিষ্ট আকার ,কাঠামো আর সঙ্ঘতি দিয়ে থাকি ।এই সমস্ত হট্টমেলা ,আট ঘণ্টা লম্বা মুভি – সবই সেই পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের জন্যে মজার হবে , আমি নিশ্চিত ।


সা-প্রা
ওদের কি আনন্দ পাওয়া উচিত নয় ?

পিন্টার
আনন্দ পেলে খুশি হব, কিন্তু আরও ভালভাবে শুনুন , সেখানে পাঁচ মিনিটের বেশি থাকতে পারব না ।মুশকিল হল , সবকিছু এত চিৎকার করে আর আমার শান্ত জিনিষটাই পছন্দ ।আধুনিক শিল্পকলায় এতো জ্যাজ আর অমসৃণতার মিশ্রণ রয়েছে অথচ এর বেশিরভাগটাই কিন্তু এদের আদর্শপুরুষদের থেকে নিম্নমানের –উদাহরণস্বরূপ জয়েসের মধ্যে এতখানি বারোজ ঢুকে থাকছে ,পরীক্ষানিরীক্ষামূলক টেকনিকের মধ্যে ,যদিও বারোজ নিজে কিন্তু খুব ভালো লেখক ।এর অর্থ এও নয় যে আমি নিজেকে একজন সমকালীন লেখক বলে মনে করি : মানে , আছি এই পর্যন্তই        

       

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে