Friday, October 12, 2018

কবিতা- নশী গিলানি ( অনুবাদ- অমিত সরকার, অরণ্যা সরকার)






নশী গিলানি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন উর্দু কবি ও শিক্ষাবিদজন্ম পাকিস্থানের ভাওয়ালপুরে, ১৯৬৪ সালে।  পড়াশোনা পশ্চিম পাঞ্জাবের ভাওয়ালপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমান পাকিস্থানের বিশিষ্ট আধুনিক উর্দু কবিদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তাঁর পাঁচটি বিখ্যাত কবিতা সংকলন ইংরাজি ও অন্যান্য ভাষায় অনুবাদিত। তাঁর কবিতার মূল বৈশিষ্ট্য একধরনের খোলামেলা আত্মকথন ও আধুনিক নাগরিক মনন, যা পাকিস্থানি উর্দুভাষী মহিলা কবিদের মধ্যে একান্ত বিরল। হয়ত তাঁর আমেরিকা প্রবাসের অভিজ্ঞতা বা ডায়াস্পোরিক শিকড়হীনতা উঠে আসে তাঁর লেখালিখিতে। 
রইলো তাঁর নটি কবিতার অনুবাদ।


অনুবাদ – অমিত সরকার

সেদিন তো আমি একাই শুধু...

সেদিন আমি তো শুধু একাই ভালবাসাবাসি   
স্বপ্ন বা বন্ধুরা কেউ নেই

সেদিন তোমার মিথ্যে ভালবাসাবাসির সমস্ত অত্যাচার
সহ্য করছি একা আমি

আজ আর কিচ্ছু মনে পড়ছে না
শুধু একটা নদী, একটা শূন্য বাড়ি

তুমি মনটাকে এতটা গুলিয়ে দিয়েছ   
ভালবাসা যেন একটা জট পাকানো ধাঁধা 

আমি কি সরে যাচ্ছিলাম তোমার থেকে     
তুমি কি সত্যিই ছিলে আমার সবটুকু

জানো, আসলে সময় না ঠিক সাপের মত
আমার উঠোনের জুঁইগুলো যেমন গিলে খায়

আজ আর কাকে বলব, এই সব বিষণ্ণ বিকেলের গল্প
একদিন কি উজ্জ্বল ছিল আমার হাতের ভাগ্যরেখা 


এইসব বন্দী নিঃশ্বাসেরা    

আটকে পড়েছি শব্দের জঙ্গলে
ডানা মেলতে পারছি না
তবু তুমি বলছ, ‘উড়ে যাও, উড়ে...’
তুমি তো আর আমার শেকল খুলে দেবে না
আমার নিজস্ব জানলা মানে তো তোমার ক্রোধ 
তাই তো তুমি সেলাই করে রেখেছ আমার চোখের পাতা
আর আমাকে বলছ, ‘ব্যাখ্যা লেখো, এই হাওয়াবাতাসের’
শেকলের শব্দে কেঁপে উঠছে আমার পায়ের পাতা
তুমি বলছ, ‘তোমার ইচ্ছেগুলো স্বাধীন হোক,
এই দামী জঙ্গলের থেকে অনেক অনেক বড় হোক।’  
তবু যে নৌকোটা আমার অনুভূতিগুলো বয়ে নিয়ে যাচ্ছে
তাতে তুমি আগুন লাগিয়ে দিলে
আমার সমুদ্রকে ঘিরে দিলে মরুবালি দিয়ে
কিন্তু জেনো, যাই ঘটুক
শ্বাসরোধী অত্যাচার, মরু অথবা জঙ্গল
এইসব বন্দী নিঃশ্বাসেরা জেগে থাকবেই...

প্রজাপতিদের ধরতে গেলে  

একদিন ভাবতাম খুবই সহজ 
এইসব সুগন্ধকে ধরে ফেলা
জড়িয়ে রাখা এইসব বৃষ্টির সন্ধ্যে
বারান্দায় বসে বসে
মুঠো করে ধরে রাখা তারার আলো 

একদিন ভাবতাম খুবই সহজ
জোনাকিদের ফিশফিশের সঙ্গে   
আমার বাগানের ফুলগুলোকেও জ্বালিয়ে দেওয়া
স্বপ্নিল দুচোখে আটকে রাখা তার স্মৃতি
যেভাবে হ্রদের ওপর ছড়ানো গোলাপ 
একদিন ভাবতাম খুবই সহজ

কি বোকা ছিলাম আমি
প্রজাপতিদের ধরতে গেলে তো যেতে হয় কত কত দূর...

তুমি শুধু স্বপ্নের গল্পটা জানো

তুমি শুধু স্বপ্নের গল্পটুকু জানো
আমি জানি স্বপ্নের ভয়ঙ্করকে

প্রত্যেকবার বেড়ানো থেকে একটা ঘর নিয়ে ফিরো 

প্রত্যেকবার বেড়ানোর থেকে একটা ঘর নিয়ে ফিরো
তোমার ক্ষয়ে যাওয়া পায়ের সঙ্গে নিয়ে ফিরো প্রজাপতিদের ডানা

আমি আমাদের সম্পর্কের গল্প লিখছি
যদি পারো, কিছু সুন্দর শব্দ এনো

আশা করছি, বিশ্বস্ততা আমাদের শেষ করে ফেলবে না
আবার আমরা নতুন প্রেমে ফিরব

যদি কখনো কোথাও কোন সুন্দরের কাছে বাঁধা পড়ো
কোন চাঁদের মতো কেউ, কোন আকাঙ্খিত ভালোলাগা, ঘরে এনো

তোমার এই যে বেড়ানোর ইচ্ছে ঘর ছেড়ে তোমাকে ছুটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে
প্লিজ, পকেটে ভর্তি ধুলোর মত কোন অনুশোচনা এনো না

এসো, আমরা শ্বাস নিই এক অদ্ভুত হাওয়ায়
তুমি যখন ঘরে ফিরবে, শুধু তোমার চোখদুটি ভরে উঠুক

আকাশের সঙ্গে শেষ সংলাপ

আমার পা গুলো যদিও ছেঁড়া, টুকরো টুকরো
আমার পথ কিন্তু শেষ হয়নি কোথাও
আমি পারি না
কারণ আমার একটা প্রদীপ নেই
যোগ্যতা নেই নতুন পথ খোঁজার
সবকিছু এত কঠিন
চোখ এত ভারী হয়ে আসে
অশ্রু নয় রক্ততে
এইটুকুই দুর্বলতা
ঈশ্বর, প্রিয় ঈশ্বর
একজন সঙ্গী খুঁজে দাও...
 
অনুবাদ – অরণ্যা সরকার

বাতাসও তার দিক বদলে নিতে পারে

হয়ত তুমি জানোনা , বাতাসও তার দিক বদলে নিতে পারে
বাসা ছেড়ে উড়ে যাওয়া সকালের পাখিরা
হারিয়ে ফেলতে পারে ফিরে আসার পথ
বসন্তকে অবাক করে নতুন পাতায় নেমে আসতে পারে সুদূর সবুজ
পাতাঝরা শুরু হতেই পারে হেমন্তের আগে
যেমন ধুলোর মত উড়ে গেছ আমার নির্দিষ্ট জীবন
জানি, তোমার ঠোঁটে এখন এক অদ্ভুত হাসির বাঁকানো উচ্চারণ   
বলছে, ‘এ আর নতুন কি ?’   
তুমি কি জানো, ‘এ গল্পে তুমিইএকমাত্র নতুন ?’  
হয়ত জানা সম্ভবও নয়, কেননা
তোমার প্রোথিত ভালোবাসা ও বিশ্বাস ধুলোর মত উড়ে যেতেই পারে
বাতাসও পাল্টে ফেলতে পারে গতিপথ


পুড়ে যাওয়া সেই  হৃদয় – আলো

সে এক পুড়ে যাওয়া হৃদয় –আলো  
আলোই ঈশ্বর, ও ঈশ্বর, তুমি আলো 
ফুল, সুগন্ধ, তারা, মৃদু হাওয়াও আলো
আসলে এসবই তুমি, আমাদের শুধু আকার পাল্টানো
বিকেলের দিগন্তরেখায় সন্ধ্যে খুলে গেলে
বুকের ভেতর কেউ বলে ওঠে ‘আলো’
এ মুহূর্ত তারাদের প্রশংসার নয়
সময় চলে গেছে- আলো
আলো, আমার সহজ স্বপ্নদের ভেঙে দেয় দিনের স্পষ্টতা
দুটো অভিশাপের মধ্যে আটকে আছি আমরা
এই অন্ধকার, এই স্বপ্নশূন্যতার মধ্যে  কীভাবে আমাদের বেঁচে থাকা, আলো ?


হাওয়ার  আত্ম নির্মান

এখন  নতুন লিখনভঙ্গিমা বাতাসের
পাতাঝরাকে অপেক্ষায় রেখে
সে শিখে গেছে  বসন্তকে হেমন্ত বানাতে

এখন বাতাস সমস্ত ভ্রমণকে অভিশাপ বানিয়ে দিতে পারে
নাছোড় অভিশাপও  হয়ে যেতে পারে বিশ্বস্ত পথ 

বাতাসের এই লিখতে শেখা সমস্ত  যৌথতাকে টুকরো করছে  
ভালবাসার ছবিগুলো কি ভীষণ নড়বড়ে
সে এখন ছায়াহীন গাছের ছবিও আঁকছে

বাতাস এখন নিভিয়ে দিতে পারে আমাদের  সমস্ত লন্ঠন
যাবতীয় স্পষ্টতায় এখন গোধুলি কুহক
বাতিল করতে পারে অবিশ্বাসী সকালকেও

ও ঈশ্বর, তুমি বাতাসকে লিখতে শেখালে
এখন বাতাস শিখেছে তার ইচ্ছে লিখতে----







No comments:

Post a Comment

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে