Sunday, October 14, 2018

কবিতা গৌরাঙ্গ শ্রীবাল






চৈতন্যবৃক্ষ


পাতার আধিক্য আর শ্যামলতা ঝেড়ে ফেলে
আকাশে শাখার দুটি হাত তুলে শূন্যে
এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন
কৃষ্ণপ্রেমে বিভোর নিমাই, হা কৃষ্ণ হা কৃষ্ণ বলে
নীলাচলের নীলিমা ছুঁয়ে যায় তার
প্রশাখার করুণ আঙুল।

মুখে কোনো কথা নেই, হাসিও ফুরিয়ে গেছে
সমস্ত কিছুই আজ অনুভবে
যে অনুভবে পাখিরা তার
দেহের ওপর নাচে,
দু নয়নে ঝরে যায় অঝোর জলের ধারা-
কৃষ্ণাঙ্গ মেঘের বুক থেকে
সবুজ ঘাসের পাতা হয়ে ওঠে সজল শ্যামল।

সকালের আলো হলে দেখা যায়
আকুল-ব্যাকুল হয়ে গাছের ভিতরে বুঝি
প্রেমের ঠাকুর কেঁদেছিল কাল সারারাত।
           ---


আমার ঈশ্বর


সকাল বেলায় আমি ঘুম থেকে উঠে
সবার প্রথমে যাকে দেখি সে আমার বাবা:
আমার ঈশ্বর।
যে আমাকে দু বেলায় খেতে দেয় ভাত মুড়ি জল
গায়ে তুলে দেয় লজ্জা ঢাকার কাপড় জামা
মাথার উপরে ছাদ
অসুখ-বিসুখ হলে জেগে থাকে সারাদিন-রাত।

এসব কিছুর জন্য
বাবাকে মাথার ঘাম দুপায়ে ফেলাতে হয়
সারা গায়ে ঘাম দেখে মনে হয় বৃষ্টি হয়ে গেছে
দূরে-কাছে, ভিজে গেছে বাবা।
গা মোছার জন্য ছেঁড়া কাপড় এগিয়ে দেয় আমার মা
যেন মাঠ থেকে বহু পরিশ্রম করে ফিরে এসেছে ঈশ্বর
অথবা উমার বর যেমন করে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে
ঘরে ফিরে উঠোনের ধাপে বসে জল চায়
তেমন আমার বাবা: মায়ের দেবতা।

স্নেহমাখা মায়ের আঁচল ধরে
বাবার অনেক কাছে যাই কিন্তু
গভীরে যেতে পারি না দূর থেকে শুধু
বাবার সে মুখ মনে করে মাথা নত হয়ে আসে
মায়ের ঠাকুর আর আমার ঈশ্বর দেহ,
মনেপ্রাণে এক দেবতার পায়ের চিহ্ন যেখানে আঁকা।
               ---


ইতর সময়


এখন ওসব কথা থাক
কে কতটা কম কিংবা কে কতটা বেশি ভালোবাসি
এই প্রশ্ন ও বিতর্ক দূরের জিম্মায় রেখে
চল আরো কিছুদিন ভালোবাসি,
যে ভালোবাসায় মনে হবে
আঙুর টক হলেও লাফিয়ে পাড়া উচিত।

খাওয়াটা পরের কথা
লাফানোটাই এখন প্রধান কাজের মধ্যে পড়ে
মরা পাতা ঝরে গেলে হাওয়া ও বাতাসে ভর করে
দূরত্বে লাফিয়ে চলে। যেখানে হৃদয় তার
এই হৃদয়ের থেকে ভালো কোনো শব্দ
না পেয়ে পাতার ঘন হাহুতাশ ধ্বনিকে লালন করে
পালন করে অশ্রুর বীজ।

এখন সমস্ত এই ইতর লোকের কথা
সময়ের ইতিহাস আলিঙ্গন করে চলে যেতে হবে
ভালোবাসার অনন্ত মহাকালের ওপারে
যেখানে জ্ঞানবৃক্ষের ফল খেয়ে তবু
জ্ঞান ফিরে আসে নি এখনো।
        ---


রবীন্দ্রসংগীত


তোমাকে যখন দেখি আমার মনের ঘরে বেজে ওঠে
লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ প্রাণেশ...
আবার সহসা আমি যখন এ গান শুনি
মনের দেয়ালে ছায়া পড়ে ভেসে ওঠে
তুমি ও তোমার মুখ এ গানের সঙ্গে
জড়িয়ে রয়েছে যেন মাধুরীলতা ও
বেতস কুঞ্জের ঢঙে।

সমস্ত দুঃখেরা বেনোজলের ধূসর ফেনা তুলে
জীবনের প্রান্তে এসে জড়ো হয়
বালি ও সিলিকনের মতো রৌদ্রে
ঝিলিক ঝিলিক করা ছোটো ছোটো সুখ লেগে থাকে
বনের সমস্ত রাঙা কুসুমের গায়।
আমি প্রীত হই আর তুমি বিকশিত হও
দুজনে গানের শেষে দিগন্তে মিলিয়ে যাই,
রবিঠাকুরের চোখে তখন আনন্দ লেগে থাকে
শরতের বিকেলের কিংবা বসন্তের নদী
জল গাছ ফুল পাতা পাখির গানের সুর
কুঞ্জবন থেকে মিলনের গন্ধ।
       ---


একা


এত বড়ো আকাশে আমাকে আজ একা একা লাগে
যদিও বতাস এসে কথা বলে যায়,
তবুও কেন যে এই আকাশ একাকী
মাথার উপরে তার নীল রং
হারিয়ে বিমর্ষ হয়ে যায় আমি তা বুঝি না।

আকাশেরো মাঝে মাঝে দুঃখ-কষ্ট হয়
অভিমান করে কথা না বলে তাকিয়ে থাকে
তোমার মুখের দিকে,
তখন তোমার পিঠ-কাটা ব্লাউজের ফাঁকে
কালো তিল দেখে হাসে চাঁদ
ভাবে এতদিন তুমি কোথায় ছিলে গো এই
উত্তম তিলের নারী
চাঁদের গায়েতে চাঁদ।

আকাশ সমস্ত তার ব্যথা ও বেদনা ভুলে গিয়ে
তোমার বুকের কেন্দ্রে উপুড় করা ঢিবির মতো
পড়ে থাকে, মাঝে মাঝে দেখা হয়
একাকী আমার ভাবনার ও ভাবের সঙ্গে,
যার হাত ধরে আমি এমন অনেক বহুমুখী
রাস্তার মাথায় এসে দাঁড়িয়েছি  

কোন রাস্তায় গেলে তোমাকে পাব।

1 comment:

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে