ডেরেক ওয়ালকট
১৯৯০-এ প্রকাশিত হলো এক মহাকাব্য 'ওমেরস'। হোমারিয়ান ধাঁচের সাতটি খণ্ডে এবং চৌষট্টিটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত মহাকাব্যটির রচয়িতা ক্যারিবিয়ন কবি ডেরেক ওয়ালকট।
মহাকাব্যটি প্রকাশের সাথে সাথেই প্রশংসার ঝড় ওঠে। নিউইয়র্ক টাইমস বুক রিভিইয়ে 'ওমেরস'কে নব্বই দশকের সর্বোৎকৃষ্ট এবং ওয়ালকটের শ্রেষ্ঠ কীর্তি বলে স্বীকৃতি দেয়। অন্যান্য অনেক পুরস্কারের সঙ্গে 1992-এ নোবেল পুরস্কারও অর্জন করে। নোবেল কমিটির সদস্য প্রফেসর জিল স্পিমার্ক বইটি সম্পর্কে বলেন " সাম্প্রতিক সাহিত্যের সবচেয়ে বড়ো অর্জন এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ"।
ডেরেক অলটন ওয়ালকট জন্মেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটি ছোট্ট দ্বীপ সেন্ট লুসিয়ার ক্যাস্ট্রিজ শহরে, 23 জানুয়ারি ১৯৩০-এ।
কয়েক শতাব্দী ধরে ব্রিটিশ এবং ফরাসিদের শাসনে থাকার পর 1979তে স্বাধীন হয় সেন্ট লুসিয়া। ইংরেজি ভাষায় কবিতা লিখলেও ওয়ালকটের মধ্যে ইউরোপীয় ইতিহাস, শিল্পসংস্কৃতির সঙ্গে সেন্ট লুসিয়ার কৃষ্ণাঙ্গ সংস্কৃতির সার্থক মেলবন্ধন ঘটেছে।
তিনি বলেছেন,"আমি এক বিচ্ছিন্ন লেখক। আমার মধ্যে রয়েছে এমন এক ঐতিহ্য যা একদিকে গ্রহণ করে যায়, আর আছে অন্য এক ঐতিহ্য যা বিস্তারিত হয়।"
ঊনিশ বছর বয়সে প্রকাশিত প্রথম কবিতার বই ' পঁচিশটি কবিতা এবং যুবকের জন্য এপিটাফ' থেকে 'ওমেরস' পর্যন্ত এবং তিরিশটিরও বেশি নাটকে ক্যারিবিয় সংস্কৃতিকে বিশ্বসংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ওয়ালকট।
১৭ মার্চ ২০১৭ তে মৃত্যু হয় এই কবি প্রাবন্ধিক নাটককার এবং চিত্রশিল্পীর।
মধ্যগ্রীষ্ম, টোবাগো
বিস্তৃত
সূর্যস্তব্ধ সৈকত
সাদা
উত্তাপ
সবুজ
একটি নদী
একটি
সেতু
ঝলসানো
হলুদ পামগাছ
গ্রীষ্মঅবকাশের
কুটিরে
তন্দ্রাচ্ছন্ন
অগাস্টের মধ্যেই
আমার
সঞ্চিত দিনগুলি
আমি
হারিয়ে ফেলেছি
অতিরিক্ত
বেড়ে উঠেছিলো, দিনগুলি
আত্মজার
মতো, আমারই বাহুর আশ্রয়ে।
ভালোবাসা, পুনর্বার
সময়
একদিন আসবে
যখন
সোল্লাসে তুমি
স্বাগত
জানাবে নিজেকেই
নিজেরই
দরজায়, নিজস্ব আয়নায়
পরস্পর
হেসে স্বাগত জানাবে দুজনেই।
বলবে,
এখানে বসো। খাও
পুনর্বার
ভালোবাসবে নিজেরই সত্তাকে
এগিয়ে
দাও মদ, দাও রুটি। ফিরিয়ে দাও হৃদয়
তাকেই,
যে এতদিন ভালোবেসেছে তোমাকে
জীবনভর,
পরের জন্য উপেক্ষা করেছো তুমি তাকে,
যে
তোমাকে হৃদয় দিয়ে বোঝে
বুকসেল্ফ
থেকে প্রেমের চিঠিগুলি নামাও
ফটোগ্রাফ
আর দুরন্ত চিরকুটগুলি বের করো
আবরণ
ছিঁড়ে আয়না থেকে নিজেকে বের করে আনো
বসো।
নিজেরই জীবনের স্বাদ নাও তুমি।
কালো অগাস্ট
এত
বৃষ্টি! এতবেশি প্রাণ, ফেঁপে ওঠা আকাশের
এই
কালো অগাস্টে। সূর্য, আমার বোন,
তার
হলুদ ঘরে প্রসবের জন্য ঢুকে গেল, বেরোবেনা আর।
সবকিছু
উচ্ছন্নে গেলেও, পাহাড়
কেটলির
মতো ধোঁয়া ছাড়ছে। উপচে বইছে নদী; তবুও
উদয়
হয়না তার। আর বৃষ্টিও থামায় না সে।
সে
এখন তার ঘরে স্নহময়ী হাত বোলাচ্ছে পুরনো জিনিসে
আমার
কবিতায়, ওল্টাচ্ছে অ্যালবাম। এমনকি
থালা
ভাঙার মতো ঝনঝন শব্দে বজ্রবিদ্যুৎ পড়লেও
সে
বেরিয়ে আসে না।
তোমাকে
ভালোবাসি, তুমি কি জানো,
এই
বৃষ্টি থামানোতে কত অসহায় আমি? তবে
ধীরে
ধীরে শিখছি
কালো
দিনগুলিকে ভালোবাসতে, ধোঁয়া ওঠা পাহাড়
মশার
গুঞ্জনভরা বাতাস এবং পান করতে তিক্ত ওষুধ
ক্ষমাসুন্দর
চোখে ফুলের কপাল নিয়ে
বৃষ্টিফোঁটার
মাঝখান দিয়ে যখন প্রকাশিত হবে, বোন আমার,
কিছুই
আগের মত থাকবে না আর, এই-ই তো সত্য
(ওরা
আমাকে আমার মতো ভালোবাসতে দেবেনা, তুমি দেখো) এইজন্য যে, বোন আমার, তখন
ফর্সা
দিনের মতোই কালো দিনগুলিকে ভালোবাসতে শিখে যাবো আমি
কালো
বৃষ্টি, সাদা পাহাড়, একসময়, যখন,
ভালোবাসতাম
আত্মসুখ আর তোমাকে।
অনুবাদ খু্ব সাবলীল হয়েছে মনে হল প্রদীপ । কবিতাগুলোও বেশ সাদা অভিজ্ঞতাজাত ।
ReplyDelete