ইস্রায়েলের নব্বই দশকের হিব্রু ভাষার কবি, প্রাবন্ধিক ও
সম্পাদক শারন হাস্-এর জন্ম ১৯৬৬ সালে। পড়াশোনা করেছেন তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে
জেরুজালেমে Kerem
Institute for teachers-এ সাহিত্য ও দর্শনের অধ্যাপিকা। ইস্রায়েলের জীবন ও
সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০০৩-এ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার। ম্যাসেডোনিয়া এবং
রোটারডাম কবিতা উৎসবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন ইস্রায়েলকে।
শারনের
কবিতায় মিথিক্যাল ইমেজ প্রচণ্ডভাবে উপস্থিত। অভিজ্ঞতার নিবিড় বুননে ওঁর কবিতা
পৌঁছে যায় বাস্তব, লৌকিক উপকথা, কিংবদন্তী আর স্বপ্নের সীমান্তগুলিতে। এবং তা’
ভীষণ স্বকীয়। টাইম এবং স্পেসের ক্রমাগত প্রবহমান চলিষ্ণুতার ওপর ছাপ রেখে দেয়
শারনের কবিতা। যেখানে মাঝেমাঝেই ধরা দিয়ে যায় ওঁর অন্তর্জগতের গোপন দুনিয়া।
সাম্প্রতিক
ঘটনাবলী, বা রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে লেখা কবিতার প্রতি শারনের সমর্থন নেই। ওঁর
মতে, এ’ ধরনের কবিতা পড়ার মুহূর্তেই পাঠক জেনে যায় এই কবিতা আগামীকাল অপ্রাসঙ্গিক
হয়ে যাবে এবং এর’ম কবিতায় যেহেতু জেনুইন লিংগুইস্টিক এবং স্পিরিচুয়াল
ট্রান্সফরমেশন থাকে না, ফলে এগুলো মাঝারিয়ানার কবিতা হয়, এবং তা’ যথেষ্ট ফেলে আসা
সময়ের।
চেতনার
একক লিঙ্গ-পরিচয়ে/সত্ত্বায় বিশ্বাস রাখেন না শারন। পরিষ্কারভাবেই
বলেন, ‘the
soul is not monolithic. More than this, the gender of the soul is not so clear.... I
don’t really understand my own sexuality. It’s an ongoing business.’
প্রকাশিত
কবিতার বই— দ্য মাউন্টেন মাদার ইজ গন [১৯৯৭]। দ্য স্ট্রেঞ্জার এ্যান্ড দ্য এভরিডে
উওম্যান [২০০১]। সাবজেক্টস্ অফ দ্য সান [২০০৫]।
নিজের
কবিতা-ভাবনা বিষয়ে বলতে গিয়ে ২০০৫-এ রামি সারিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে শারন
বলছেন,—
‘There are
people who claim that one must have quite a broad knowledge of culture to
understand it [to define own poetics]. I can’t define my poetics, not because
I’m lazy, but because it changes. In my first book ‘The
Mountain Mother is Gone’ it was
important to me to try and create a world which would contain my personal
experience, for which I had no documentation and no model. I felt that I was
inventing the wheel and that I would change the face of Hebrew. It’s obvious
that this is not the case, but I felt I had a great mission, to give expression
to a place within me that had been seized by silence – my relations with my
mother and my lover – in the absence of a mythological-psychological-cultural
space, one which I did not find in literature, an unwitnessed and wordless space.
The crisis of [my] writing was a crisis caused by the fact that I couldn’t read
anywhere what I wanted to say. I had no choice but to write it myself. That was
my motivation, to give the world a mythology of women’s relations.
[...] ‘Real’
visions, that I’ve actually seen, and things that happened to me, but within my
poetics I am required to turn them into other visions, that is, I transform them
into extremes from the point of view of mythological language.
[...] My
poetry doesn’t lean upon any external ideology, and so no word with ‘ism’ at
the end seems fruitful to me.’
ভোর চারটের
কবিতা
ভোর চারটেয় কবি, প্রেমিক এবং পাগলেরা ভাবে
আরশির জীবন জীবাত্মার ছাঁচে ও গঠনে তৈরি
আলোক-উৎসারী প্রতিচ্ছবিকে বেঁধার সাহস যদি ওরা ক’রে উঠতে পারে, ভেঙে যাবে
সব গভীর
শাদা একদল জেলিফিশ সমুদ্রতীরে জন্মেছে—
(ছোট্ট সুন্দর নাশপাতির মতো মিষ্টি ছিল একসময়,
স্নানের পোশাক, নশ্বর, আধ-ন্যাংটো, আর উদ্ধত সারা গ্রীষ্ম জুড়ে।
আলোকভেদ্য শরীরে লক্ হয়ে যাওয়া একশ’ বছরের ভয় ঘুরে যাচ্ছে প্রতিশোধের
দিকে।)
ভোরের মধ্যে আমাদের ঢুকিয়ে দেবে ব’লে জেগে উঠছে গেটগুলো, খুঁটি হাতে,
রাজদণ্ড হাতে
চাঁদ এবং সূর্যের জ্যোতির্বলয়টায় ফাটল ধরছে। হারিয়ে যাচ্ছে বলয়টা। ঘুম
ভাঙিয়ে দিচ্ছে।
দেওয়ালের কোনো লুকোনো খাঁজে, তিমি মাছের পেটে
এখনও তুমি খোদাই হচ্ছ ঘুমের ভেতর। যথার্থ এক কাঠের বালক।
কিন্তু শ্বাস চলছে— যেন ঝড়ের হাতে
তুমি ধরা প’ড়ে গেছ
আর প্রতিনিঃশ্বাসে প্রতিহত করছ যে তোমার পিছু নিয়েছে।
পলায়নশীল কোনো আলো নেই। স্মৃতি দিয়ে পূর্ণ হয় জড়।
শ্রেণি, প্রকার ও বর্গে আমরা বাছাই করছি নিজেদের।
অনেক উপাদানের মধ্যে এক উপাদান হিসেবে রাখছি না।
হাওয়া এবং আগুন থেকে উৎপন্ন জীব, কিন্তু মানুষ।
হলুদ চোখের জন্তুরা মেপে নিচ্ছে
কি থেকে কি হ’ল। কি রইল।
তোমার সাথে উলঙ্গ হয়ে দেখা করেছি মাঝরাতে— সময়ের একেবারে শেষ প্রান্তে।
যেখানে একটা শরীর হস্তান্তরিত হয় আরেকটা শরীরের জন্য
কুমড়ো-পটাশ অথবা রাজধানী জেগে উঠছে রথ থেকে
ক্ষেপণাস্ত্রের বিস্ফোরণে চাঁদের কমলা-শাদা পাথুরে ডায়াস ভেঙে টুকরো হ’য়ে
পড়ছে আমাদের হাতে
কর্জ দেওয়া লব্জগুলো ফিসফিস করছে সমুদ্র তারায়
তাদের মিষ্টত্বে, আকাশপথের মতো শরীর
মাটি এবং শূন্যের মাঝখানে
সমস্ত প্রেত ও জীবাত্মা এ’ সম্পর্কে জ্ঞাত হয়। ইহাই জ্ঞান।
সমস্ত মেটাফরকে ব্ল্যাক-হোলে ছুঁড়ে ফেলতে উৎসুক যে বিজ্ঞান
যার অনস্তিত্ব বমি হয়ে হয়ে যেতে পারে একরাতেই
an exact
mathematical notation of loss
তোমার মুখ ভরে যাচ্ছে বছরের পর বছর দিয়ে, ভ্যানিশ হয়ে যাচ্ছে মানুষের গভীরে
থাকা
গোলাপি আর নরম মেয়েদের মুখ।
এটা আমি নই যে তোমাকে ছুঁলো। এটা আলো।
রিফিউজ্-ক্যাম্প বিহীন আলো, আমাদের ঝাঁকিয়ে দেবে।
গোল-চোখের কাদামাটির শরীর,
প্রচুর এক ব্রহ্মাণ্ডের কিনারায় ঘুরে দাঁড়াব
চমকে যাব আমরা আমাদের ভালোবাসায়।
ঠিক কতবার
আমরা ঘরে ফিরতে চাই
সমুদ্রযাত্রাকালে কতবার আমরা
ঘরে ফিরতে চাই?
রাতের দরজা খুলে যায়, ধীরে
ঘুমন্ত জন্তুদের দরজা, যা লাফিয়ে ওঠে তাদের স্বপ্নের ভেতর
কাচের দরজা, যেখানে চোখ দেখতে পায় পেছনের জিনিস
এবং মুখ পাথরে পরিণত হয়।
ধীরে, জাহাজ ঢুকে যায় রাতের মধ্যে
আলো ছড়াতে ছড়াতে মুক্তোর ভেতর দিয়ে
আমাদের লাভ-ক্ষতির ইশ্তেহার লেখা জীবনটাকে নিয়ে
দু’-একটা প্রতিশ্রুতির জাঁকজমক আর সত্যিই ধ’রে রাখা সম্ভব হ’ল না।
নির্ভয়ে স্থির আমরা কি তাকিয়েছি অংশুমান চোখে
ব্যাকুল মুখের বিশ্বাস রেখে খেয়েছি কি চুমু
হয়তো বসতে পারি পাতার মতো তার সবুজ সীমানার
দিকে
এমন কিছুর মতো যার কোনো স্থান ও সময় নেই
ভেঙে যাচ্ছে, ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে আমাদের
ভেতর থেকে
শূন্যে ঝুলে থাকছে যে মরীচিকার আলো
পরিণত হচ্ছে মুক্তো এবং গতিতে
যে সমস্তকিছু আমরা দেবো বলেছি, গৃহীত হয় নি।
যে সমস্তকিছু আমাদের জন্য, না ছুঁয়ে পিছিয়ে
এসছি ভয়ে
এসবই ঘটে চলেছে চোরের মতো চুপি চুপি ভেসে চলা
এই জাহাজটায়
সমুদ্রযাত্রাকালে কতবার আমরা
ঘরে ফিরতে চাই?
আর্মচেয়ারে ফেলে আসা নিজের ছায়াটাকে আবার বসাতে
আলোয় পরিণত হওয়া একটা মুক্তো তাকে দিতে
যে আবেগ কিছুই স্থাপন করতে কিংবা নিঃসঙ্গতার কালো রক্ত দিয়ে কিছুই আঁকতে
চায় না
বরং ভাসাতে চায় তাকে অবাধ সোনার মতো,
যে ক্ষুধার আকুল লোলুপতা থেকে মুক্ত হয়ে একবার নদীতে ভেসেছে
বাঁশুরিয়া
যে কথা বলতে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ছি—
তুমি না ডাকলে ম’রে যাব।
সত্যি আর মিথ্যে, দুটো বলতে গিয়েই
বিভ্রান্ত হচ্ছি আমি।
যে কথায় পাহাড় সরে না।
নিজেকেও কোথাও সরাচ্ছি না। ছাদের
কিনারায় এক বোকা লোক বসেছে—
বাঁশি বাজাবে।
আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
তুমি ডাকো নি। কেউ মারাও যায় নি। শুধু
শ্রীমান মুহূর্ত ছাড়া।
শেয়ালের
প্রতি
চোখের পাতার নীচে, বন্ধ চোখের নীচে
ভীষণ
কাঁপছি
তুমি আগুন জ্বাললে আমার চারপাশে। আমি বরফ ঠাণ্ডা।
টেনে আমাকে মাটিতে বসালে। শক্ত, দুটো আঙুর গাছ
ঢেকে রেখেছে আমাদের। শ্বাস নেওয়া যাচ্ছে না। আঙুরের ওপরে আঙুর
আর আমার শরীর ছড়িয়ে আছে কালো মাটিতে
তুমি যাকে ছুঁলে, সে আমি নই। আমার ভেতরে আসোনি তুমি।
আমার ভেতরে থাকা শেয়ালের কাছে এসেছো। বন্য বুনো এক জন্তু
আর মুখমণ্ডল নেই এমন রাতের ভেতরে এসেছো।
ভয়ঙ্কর নরম। প্রতিরূপ দিতে সম্মত নয় যে-গভীর আমার কাছে
একটা অথবা দুটো দিনের
পরম ভগ্নাংশের মধ্যে, সহজের কঠিন শাদা বিস্তারে—
লুঠ হওয়া শিকারের মতো, তার খোলা ও বিশাল আমাকে অসাড় ক’রে দিচ্ছে।
এর মধ্যে, আমি পোড়াই গতিশূন্যতা।
জীবন প্রিয় হয়ে উঠছে আমার কাছে : দূরের কোনো এক ব্যাধের কাছে ছিল
তার চোখ পরিষ্কার।
শরীর এরপর প্রেমের স্মৃতি-ভ্রমণে বেরোলে—
একটা নরম গলার আওয়াজ শোনা যায়, মিষ্টি...
ইতিমধ্যে আমি জেনে গেছি, এই আওয়াজ
সূর্য, ঘাস, জেগে ওঠার জন্য রক্ত
সবাইকে নিলামের দর দেবে।
আর এখান থেকে দৌড়ে যেতে দেবে না আমাকে।
মেয়েটি
এলোমেলো কথা বলছে
অন্ধকার দেয়ালের সাথে কথা বলছে মেয়েটা। এলোমেলো।
মা ঘুরে বেড়াচ্ছে খোলা কুয়োর ওপর
সামান্য কেঁপে ওঠে কুকুরের কান— যেখানে আলো নেই
দূরত্ব বেড়ে যায়। পালাতে থাকে গলার আওয়াজ।
প্রেমের ভান করা মাস্টার, মেয়েটাকে লাল ফল দেখায়
যেন এক ঝাপসা নদীর তল থেকে তুলে এনেছে,
একঝাঁক মাছ শূন্যে লাফিয়ে ওঠে। ঝকঝকে।
মেয়েটি স্বাদ নেয় লাল স্বচ্ছ ফলের
প’রে আছে কালো, নোনতা রিং
হাওয়ার মতো মাটির ওপরে বসেছে মা
মাস্টার মেয়েটাকে আলোতে পাঠিয়ে দেয়। হাসছে ওর পেছনে দাঁড়িয়ে :
অন্ধকারের জাদু
যন্ত্রণার থেকেও গভীরে খোদাই হচ্ছে
শব্দের মধ্যে ভীষণ রাগের মিষ্টিভাব।
আলোর রেখার ওপরে হাঁটছে মেয়েটা—
শেষ সীমানা ওকে ভেদ ও টুকরো করে।
No comments:
Post a Comment