Tuesday, October 16, 2018

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে





অমিয়,
এতদিন পরে এই পাড়ারই দু-একটা বইয়ের দোকানে ঢুকেছিলাম। হা ঈশ্বর – থরে-থরে কী সব সাজিয়ে রেখেছে। যে-সব বইয়ের বহু বছর ধ’রে নাম শুনে আসছি, যে-সব বই বহু বছর ধ’রে পড়তে চেয়েছি, যাদবপুরে পড়াবার সূত্রে যে-সব বই পাগলের মতো খুঁজেছি, এখানে হাত বাড়ালেই তার যে-কোনোটিকে তুলে নেয়া যায়, মায় মঁতেসকিউ-র ‘‘পারস্য পত্র’’। সবই জানতাম, তবু জাজ্বল্যমান চোখে দেখে কেমন চমক লাগে। আসেত্ম-আসেত্ম অনেকগুলো পেপার-ব্যাক কিনতেই হবে – যদিও জানি তার প্রায় কোনোটাই আমি নিজে পড়বো না, যথাসময়ে তোমাদের উপভোগের জন্য পাঠিয়ে দেবো। পেপার-ব্যাক ছাড়া আর যা পাওয়া যায় সেদিকে তাকাতেও ভয় করে। এই ওয়াশিংটন স্কোয়ার পাড়ার নামান্তর হ’লো Greenwich Village সংক্ষেপে the Village, এককালে শিল্পীদের পাড়া ব’লে নামডাক ছিল, এখনো পূর্বগৌরব লুপ্ত হয়নি – বীটনিকদের বাসভূমি এখানেই শুনতে পাই। এ-পাড়ার পুরোনো বইয়ের দোকানগুলিও বিখ্যাত, পথ চলতে-চলতে কাচের জানলায় তস্করনয়নে দৃষ্টিপাত করি – একদিন ভাবছি সাহস ক’রে ঢুকে পড়বো, মহামূল্য পুরোনো এডিশনের ফাঁকে-ফোকরে হয়তো আমার সাধ্যের উপযোগী কিছু লুকিয়ে আছে। এদের এই প্রাচুর্যের সামনে আমরা কেমন অসহায় বোধ করি – খাবার, বই, কাপড়চোপড়, বিলাসদ্রব্য, যা-কিছু ভাবতে পারো, দোকানগুলো একেবারে উপচে পড়ছে যেন, রবিবারের নিউ ইয়র্ক টাইমস ব’য়ে নিতে আসতে মুটে ডাকতাম (যদি পাওয়া যেত), ছবিওলা পত্রিকা বই লোকেরা জঞ্জালের সত্মূপে ফেলে দেয়, কোনো-কিছু বিকল হয়ে গেলে না-সারিয়ে নতুন কেনে। পুরোনো জিনিশের উপর আমাদের যে-মমতা জন্মায়, সেই মোহ থেকে এরা একেবারে মুক্ত – কোনো স্মৃতির সেবা এরা করে না, জীবন এত জঙ্গম ক’রে ফেলেছে যে এক মুহূর্ত কোথাও দাঁড়াবার অবকাশ নেই। আমাদের দারিদ্রে্যর কথা অনেক শুনতে পাই, কিন্তু এই অত্যধিক প্রাচুর্যেও মন ঠিক তৃপ্তি পায় না – বড্ড বেশি, বড্ড বড্ড বড্ড বেশি, শেষটায় এরা নিজেরাই না একদিন সব ভেঙে-চুরে ছারখার ক’রে দেয়। বইয়ের কথাই ধরো : ভেবে দ্যাখো তুমি, একটা মানুষ জীবনে কত পড়তে পারো, আর প্রত্যেককেই কি গ্রীক চৈনিক ভারতীয় জর্মান রাশিয়ান সব সাহিত্য পড়তে হবে? একটা নেশার ঘোরে চলছে : যে-কোনো বিষয়ে যে-কোনো ভালো বই কিছুদিনের মধ্যে পেপার-ব্যাক-এ বেরোবেই, অচিরে না ফাউন্টেন পেনের মতো বাঁধানো বইও লুপ্ত হ’য়ে যায়, তাহ’লে বই জিনিশটার স্থায়িত্বই ভেঙে গেলো। ভগবান করুন, এ-দেশে যেন শেষ পর্যন্ত কিছু শিক্ষিত ধনী লোক টিকে থাকে – ঐ দুই বিশেষণের সমন্বয় সব দেশেই বিরল হ’য়ে আসছে, আমেরিকার সমাজ তো প্রায় শ্রেণীহীন। থাক এসব কথা, এ-সবে আমাদের কারো কিছু এসে যায় না, আসল কথা এই যে এখানে অনেক ভালো-ভালো বই পাওয়া যায়, কিছু তোমাদের পাঠাবো।
বুব
 (নিউ ইয়র্ক থেকে অমিয় চক্রবর্তীকে লেখা বুদ্ধদেব বসুর চিঠি)


সম্পাদকীয় দপ্তর- বেবী সাউ মণিশংকর বিশ্বাস সন্দীপন চক্রবর্তী
                            হিন্দোল ভট্টাচার্য শমীক ঘোষ






যোগাযোগ  ও লেখা পাঠানোর ঠিকানা - abahaman.magazine@gmail.com

No comments:

Post a Comment

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে