( কবি পরিচিতি: ফরাসি
পল ভেরলেনের জন্ম ৩০ শে মার্চ ১৮৪৪ সালে ফ্রান্সের প্যারিস শহরে । তাঁর কবিতায় ফরাসি
কবি শার্ল বোদেল্যেয়রের প্রভাব লক্ষ্য করা যায় । দীর্ঘজীবন সম্ভব না হলেও তিনি তার
কাব্য প্রতিভায় মুগ্ধ করেছিলেন তৎকালীন ফ্রান্সের মানুষকে । মাত্র ৫১ বছর বয়সে
১৮৯৬ সালে তিনি মারা যান । )
আমার একান্ত স্বপ্ন
( Mon Rêve familier /
My Familiar Dream)
তবু আমি তীক্ষ্ণ
কাল্পনিক স্বপ্ন দেখি
আশ্চর্য, যে মেয়েটিকে
আমি কখনও দেখিনি আগে
আমি ভালবাসি তাকে, সে
এত নতুন
প্রতিটি সময়ে তার
নতুনত্ব নিয়েই সে থাকে
আমাকে ভালবাসে তার
রহস্য
হৃদয়ের মেঘরাশি, যা
কারোর হাতে নেই
এবং যে একাকী, যার চোখ
চিরতরে ভিজে
সত্যি, তেমনভাবেই
সাজানো তার প্রিয় কপাল
আর তার চুল ? লাল,
সোনালি নাকি বাদামি ? আমি তা জানি না
জানি না তার নাম, জানি শুধু সে
সরস ও পরিপূর্ণ
সে এমন বন্ধু যাকে ভালো
না বেসে থাকা যায় না
কিন্তু জীবন ? তার
ক্ষণিকের প্রভা
তার স্বর, গান,দূরত্ব ও
বিবর্ণতা
আর্তনাদের সুর হয়ে বেজে
ওঠে শব্দের ভিতরে
আর কখনও নয়
( Nevermore / Never
more )
হে পুরনো বন্ধু, চেষ্টা
ও সত্যের মধ্যে দিয়ে ফিরে এসো আমার হৃদয়ে
নতুন করে উত্তোলন করো
তোমার রঙিন জয়
ধোঁয়ার পরিবর্তে তুমি
ভরে দাও অন্যকিছু
গহ্বরের সম্মুখে ফুল,
বিরাট ফাঁক
হে পুরনো বন্ধু, চেষ্টা
ও সত্যের মধ্যে দিয়ে ফিরে এসো আমার হৃদয়ে
ঈশ্বরের স্তবগান
পুনর্জীবিত করো
অঙ্গের সচল নালিকার
গর্বে
তোমার মুখ ও যৌবনের
উর্বরতা তুলে ধরো
নিজেকে সাজাও স্বর্ণে,
হলুদ দেওয়ালে
ঈশ্বরের স্তবগান
পুনর্জীবিত করো
ধ্বনিত ঘন্টা, ঘন্টার
ধ্বনি যেমনই হোক ছোট বড়
আমার আশাহীন স্বপ্ন
পাবে আকৃতি, পাবে সুখ
এখানে আমার যত্ন
আর্তিগুলো সবই অপমানিত
বাতাসে, জলযাত্রায়
মানুষেরা যেখানে ডাক পায়
ধ্বনিত ঘন্টা, ঘন্টার
ধ্বনি যেমনই হোক ছোট বড়
সুখ এসেছিল হেঁটে একদিন
আমার পাশাপাশি
নিজেকে পুনর্জীবিত
করিনি আমি, এ ব্যর্থতা আমার
ফলের উষ্ণতা, তার
ভিতরের স্বপ্ন, উত্তরণ
ভালবাসা, সবটাই ছিল
সুখ এসেছিল হেঁটে একদিন
আমার পাশাপাশি
জ্যোৎস্না
( clair de lune /
Moonlight)
তোমার অন্তর এক প্রশস্ত
কল্পনার মতো
সেখানে মুখোশ ও মুখশ্রী
দুই-ই প্রজ্জ্বলিত
বীণার তার এবং নৃত্য,
যা আসলে বেদনামথিত
তোমাকে লুকিয়ে রাখে
সৌন্দর্যের আড়ালে
সঙ্গীতকে ধীরে ধীরে করে
তোলো বৃহৎ জীবন
ভালবাসাময়, নিশ্চল ও
শান্ত
তাদের সুখের ওপর বজায়
রাখো বিশ্বাস
সেইসব সঙ্গীত তুমি ধরে
রাখো জ্যোৎস্নায়
শান্ত পরাভব সেই
জ্যোৎস্না, অপূর্ব ক্লেশে বিকশিত
পাখিদের মতো এসে বসে
স্বপ্নময় গাছের ডালে
হয়ে ওঠে ঝর্ণা, চিত্তের
প্রবাহ
ঝর্ণার ঋজুতায়, --
নিজস্ব উল্লাসে
সরণি
(L'Allée / The Lane)
চোখেমুখে রঙ লেগে, এ
যেন বিগত দিন
যেন গ্রাম্য সংঘাত, তার
গালের মাংসে লেগে
ফিতের মতো, বিরাট,
অতলের ন্যায়
তাকে ডেকে আনে রাস্তার
ছায়ায়, এবং সেও যায়
তার সমস্ত সবুজাভ বসতি
দেখা যায়
তার সহস্র পশ্চাদগামী
লাবণ্যপথ
যা কিনা কোকিলের ডাকের
চেয়েও সুমধুর
তার নীলাভ ভূমি যেন
দীর্ঘ প্যাঁচানো আঙুল
তার ছন্দ, পরিতৃপ্ত সবই
বিহ্বল
যেন পাক খায় ওপর দিয়ে
নাকের প্রসারিত অংশে,
প্রবাল দু'ঠোটে, যেন পরিপূর্ণ
সেও এক গর্বাণ্বিত
অপেক্ষা এক সুন্দরের জন্য
সেও এক দ্বিধা,
মেঘমুক্ত সুদূর
স্মিত অথচ রঞ্জিত তার
অভ্যর্থনা
বনদেবতা
(Le Faune/ The Faun)
আবির্ভূত হল বনদেবতা
সবুজাভ হাসি সম্ভবত তার
চিহ্ন
কিছুটা বৃষ্টি তার
অস্তিত্ব
যেন তার প্রতিটি
মুহূর্তই প্রশান্ত
যা আমাদের এখানে টেনে
আনে, দাঁড় করায়
তোমাকে, আমাকে,---
আমাদের আবেগকে
যাতে আমরা একঘন্টা
অন্তত ভুলে থাকতে পারি
আমাদের মধ্যে এই
শ্রুতিকটু শব্দগুলো
অতলে নিক্ষিপ্ত প্রেম
(L' Amour par terre /
Love cast down)
একরাত্রে বাতাসে ভাঙল
এই মূর্তি
যা ছিল পার্কের একটি
কোণায় দাঁড়িয়ে
যা আসলে প্রদীপ্ত, তা
দিয়েছে নাড়িয়ে
সামান্য কিছুটা হাসি যা
করেছে পূর্তি
একরাত্রে বাতাসে ভাঙল
এই মূর্তি
কতটা বাহিত হল
ভাস্কর্যের নামে
ছায়ার মহিমা আজও যেন
এসে থামে
ভোরের নিঃশ্বাসে
ছড়িয়েছে তবু ফূর্তি
কতটা গহিন শোক স্থির
হয়ে আছে
বয়ে গেছে একা, অন্তরে
ডেকেছে যত
আগামিকালের স্বপ্নে দয়া
আনে তত
তবুও মৃত্যুতে একা,
আঁধারেতে বাঁচে
কতটা তোমার শোক ?
স্পর্শে ব্যথা কমবে ?
চোখের দেখাতে যদি ছুঁয়ে
যায় রতি
সোনালি বেগুনি রঙ নেয়
প্রজাপতি
তার নীচে প্রেম এসে
তবুও কি থামবে ?
গাছেদের মধ্যে
(La lune Blanche/
Among the trees)
গাছেদের মধ্যে
চাঁদের আলোর মতো সাদা
ক্ষয়ক্ষতিপূর্ণ আবদ্ধে
আজকের রাতটুকু বাধা
পাতা আর শিরায় শিরায়
হে বন্ধুনি, তোমার
পীড়ায়
ঘুমের ভিতরে যত
বিকিরণ হয়ে ওঠে গাঢ়
আঁধারে ক্রন্দনরত
বাতাসের অভিমান আরও
সুতরাং তাই
স্বপ্নের সময়ে চাই
স্বর্গ, তারাভরা রাত
নিসর্গের দান
অসংখ্য প্রপাত
আর পৃথিবীর পরিত্রাণ
সুদূরের আশায়
স্বপ্নের সময়ে, এবং
ভালবাসায়
আমি ঘুরে বেড়াই
উদ্দেশ্যহীনভাবে
( I' allais par des
chemins perfides / I used to wander aimlessly)
আমি ঘুরে বেড়িয়েছি
উদ্দেশ্যহীনভাবে
আমার গন্তব্য নিয়ে,
আমার অবস্থা নিয়ে
তোমারই হাত, যা আমাকে
দেয় নির্ভরতা
মাথার ওপরে দিগন্ত
বিস্তৃত রাত
অনেক নক্ষত্রের মতো
আমার আশাও জ্বলছে
যেভাবে তোমার চোখের
আলোয় আমার ভোর হয়ে ওঠে
চির নৈঃশব্দ্য --- যেন
সে নিজেকে রক্ষায় ব্যস্ত
প্রান্তর--- সেও নিজের
হৃদয়ে বিলীন
শুধু তোমার স্বর
উদ্ধুদ্ধ করে আমায়, বলে এগিয়ে যেতে
হ্যাঁ, আমার হৃদয়ে
আঁধার ছিল, বেদনা ঘিল, ছিল বিষাদ
একাকীত্ব ছিঁড়ে খেত
তার সব টুকরো
প্রিয় ভালবাসা, তোমার
শৈল্পিক প্রভা
ভিড় করে এল কোনও
বিবর্ণমুহূর্তে
শহরের বৃষ্টির মতো,
আমার হৃদয়ে
(Il pleure dans mon
cœur / Like city's rain, my heart)
শহরের বৃষ্টির মতো,
আমার হৃদয়ে
বৃষ্টিতে কান্নায়
ফোঁটা, তবে কী এখন
বলায় মতন ভাষা আছে এ
বিদায়ে
যতখানি ভরে আছে বেদনা
হৃদয়ে
বৃষ্টির প্রতিটি শব্দ,
শুনেছ অযথা
মাঠের ওপরে তারা শুধু
ঝরে পড়ে
আহা ! সেসব তো হৃদয়ের,
চিরব্যথা
মিষ্টতা তিক্ততা যাই
বলো একই কথা
চোখের এ বৃষ্টি, ---
কিন্তু তা কে জানে, কেন ?
হৃদয়েই আটকে থাকে, ভরে
ওঠে ধীরে
তার কোনও সত্য নেই, সবই
মিথ্যে যেন
তা হলে কী হবে,---
কিন্তু তা কে জানে, কেন ?
এতটা যন্ত্রণা নয়, তবুও
কিছুটা
যেন প্রেম নয়, নয় কোনও
বড় ঘৃণা
সরলতা, লিপ্সা, শুধু
সহজ নীচুটা
এভাবে ভুগিয়ে গেল, মনের
কিছুটা
ধূসর সন্ধ্যায় উজ্জ্বল
ও গোলাপি দৃষ্টি
( Le piano que baise
une main frêle / Bright in the evening's gray and pinkish blur )
ধূসর সন্ধায় উজ্জ্বল ও
গোলাপি দৃষ্টি
একটি পিয়ানো, ধীর
চুম্বন, ঋজু হাত
সাদা ফর্সা একটি
প্রদীপ্ত আহ্বান
অনেক আগের একটা বাতাসে,
---স্নাত, আহত
তবু সুন্দর, --- আমাকে
শিকার করে আনে
তার সুগন্ধি শরীরের
নিগূঢ় ভয়ে
অথচ হঠাৎ যা কিছু হল
এখন
পাথরে আছড়ে পড়ল আমার
দেহ, সেটাই কি নিয়তি ছিল ? কিন্তু কেন ?
কী চাও তুমি ? কী চায়
তোমার যৌবনতরঙ্গ
মিষ্টতা, না কি প্রশান্ত তিক্ততা
?
কী করতে চাও তুমি আমার
সঙ্গে ?
যাই করো তুমি, আমরা
মরতে চলেছি
জানলা পেরিয়ে সৃজনসবুজে
।
No comments:
Post a Comment