Saturday, October 13, 2018

ইরাকের কবি দুনিয়া মিখাইল(পাঠ ও ভাষান্তর : অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়)







দুনিয়া মিখাইলের জন্ম ১৯৬৫-তে, বাগদাদে। ওঁর কবিতাকে আপাত দৃষ্টিতে যতটা নিষ্পাপ বলে মনে হয় ততোটা নয়। বাগদাদে তিনি ছিলেন ততোদিন, যতদিন ওঁর কবিতাকে প্রশাসন নিষ্পাপ বলে ভেবেছে। মিখাইল যুদ্ধ নিয়ে কবিতা লেখেন। যে কবিতাগুলো বীররসাত্মক নয়। কবিতাগুলো পাঠকের কানে কোনও সুর বাজায় না। যুদ্ধ নিয়ে মিখাইল কবিতাগুলো লেখেন একজন নারী হিসেবে, একজন মা হিসেবে, একজন বন্ধুর মতো।

গ্রন্থপঞ্জী
দ্য ওয়ার ওয়ার্কস হার্ড (২০০০)
ডায়রি অফ এ ওয়েভ আউটসাইড দ্য সী (২০০৯)


যুদ্ধ কত কাজের

কী রাজকীয় রূপ এই যুদ্ধের
কত ব্যগ্র
কত দক্ষ
ভোর হতে না হতে তার সাইরেন জেগে ওঠে
অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে দেয় নানান জায়গায়
আকাশে দুলে যায় তার সেনাদল
আহতের কাছে পেতে দেয় স্ট্রেচার
মায়েদের চোখে ডেকে আনে জল
গর্ত খুঁড়ে সরিয়ে ফ্যালে ধ্বংসস্তূপ...
কেউ নিষ্প্রাণ, কারুর তখনও প্রাণ আছে
কেউ পাংশু, বিবর্ণ, কেউ ধড়ফড়...
শিশুদের মনে এসব নানান প্রশ্ন তোলে
আকাশে মিসাইল উড়িয়ে বিনোদন দেয় খোদাকে
মাটিতে বপন করে মাইন
আর ছ্যাঁদায় ছ্যাঁদায় ফোসকা পড়ে তার গায়ে
ঘরের পর ঘর ফাঁকা করে লোকগুলোকে হটাতে থাকে
দাঁড়িয়ে থাকে যাজকের পাশে
যেন তিনি অভিশাপ দেবেন শয়তানকে
(বেচারা শয়তান, তার একটা হাত এখনও ছ্যাঁকা দেওয়া আগুনে)...
যুদ্ধ তার কাজ করেই যায়, দিন রাত
শাসকদের সে অনুপ্রেরণা দেয়
লম্বা লম্বা বক্তৃতা দিতে
সেনাপতিদের পুরস্কার আর
কবিদের ভাবনা দেয় সে।
কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কারখানায় তার বিরাট অবদান
মাছিদের জন্য খাদ্যের যোগান দিয়ে যায় সে
ইতিহাসের বইতে যোগ করে নতুন নতুন পাতা
ঘাতক আর মৃতদের মধ্যে সাম্য আনে সে
প্রেমিক-প্রেমিকাদের সে চিঠি লিখতে শেখায়
যুবতীদের অভ্যস্ত করে অপেক্ষা করতে
প্রবন্ধে আর ছবিতে ভরিয়ে দেয় খবরের কাগজ
অনাথদের জন্য গড়ে তোলে নতুন বাড়ি
উৎসাহ দেয় কফিন নির্মাতাদের
পিঠ চাপড়ে দেয় কবর খননকারীর
আর হাসি এঁকে দেয় নেতার মুখে
তুলনাহীন তার শ্রম
তবু কেউ তার এতোটুকু তারিফও করে না...

সর্বনাম

ছেলেটি একটি ট্রেনকে নিয়ে খ্যালে
মেয়েটা বাজায় সিটি

তারা দুলতে দুলতে চলে

ছেলেটি একটি দড়িকে নিয়ে খ্যালে
মেয়েটা একটা গাছে বাঁধল দড়ি

তারা দোলনা দুলে চলে

ছেলেটি একটি স্বপ্ন বুনে খ্যালে
মেয়েটা ওড়ায় পালক

তারা তখনও উড়েই চলে

ছেলেটা এক সেনাপতিকে ডাকে
মেয়েটা বানায় সেনাদল

তারা যুদ্ধ ঘোষণা করে।

এরোপ্লেন

বাগদাদ থেকে যে প্লেনটা আসছে
আমেরিকান সৈন্য নিয়ে
আর উঠে যাচ্ছে
আরও উঁচুতে
চাঁদের ওপরে
প্রতিবিম্বিত হচ্ছে টাইগ্রিস নদীর ওপর
মৃতদেহের মতো বিপুলভাবে জড়ো হওয়া মেঘের ওপর দিয়ে
প্রাচীন এক বীণার ওপর দিয়ে
হাতের ওপর বুলিয়ে যাওয়া চামড়ার ওপর দিয়ে
অপহৃত হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর ওপর দিয়ে
শিশুদের সাথে বেড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের ওপর দিয়ে
পাসপোর্ট অফিসের বিরাট লাইনের ওপর দিয়ে
প্যান্ডোরা বাক্সের খোলা ঢাকনার ওপর দিয়ে
বালির মধ্যে কেটে পড়ে যাওয়া সেই আঙুল থেকে ছ হাজার মাইল দূরে
এই বিমান তার হা-ক্লান্ত যাত্রীদের নিয়ে নামবে







No comments:

Post a Comment

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে