Saturday, October 13, 2018

আলেক্সানদার ফাদায়েভ (বাংলা অনুবাদ – জয়ন্ত ভট্টাচার্য)









ডিকি বার্ড

[মানুষ ইতিহাসের স্রষ্টা। দুটো হাত আর চিন্তা করার ক্ষমতা, প্রতিমুহূর্তের সৃজনশীল উদ্ভাস এবং বিকশিত মস্তিষ্ক – এ হাতিয়ার নিয়ে সে তার চারপাশকে পাল্টায়, পাল্টায় স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া বিভিন্ন শ্রমসম্পর্ককে, মানুষের সাথে মানুষের এবং সমাজের স্তরায়িত সম্পর্ককে। রুশ বিপ্লব বা বলশেভিক রেভ্যুলিউশন মানুষের সৃষ্টিশীলতাকে মুক্ত করেছিল অসংখ্য বাঁধন থেকে। আবার নতুন বাঁধনের জন্মও পরবর্তী সময়ে দিয়েছে। সে অংশটুকু আপাতত মূলতুবি থাক। গোর্কি, মায়াকভস্কি, ফুরমানভ, অস্ত্রোভস্কি, আর্কাদি গাইদার, যশচেঙ্কো, পাস্তেরনাক, আন্না আখমাতোভা, আলেক্সানদার ব্লক, সলঝেনিৎসিন সহ কত কত বিপুল সম্ভাবনাময় সাহিত্যিক ও তাদের সাহিত্য সম্ভার তুলে দিয়েছে বিশ্বের পাঠকের হাতেআঞ্চলিক ভা্ষায় লেখা সাহিত্য তখন দ্রুত অনুদিত হয়ে যাচ্ছে মূল রুশে বা ইংরেজিতে, ছড়িয়ে পড়েছে দেশের ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। মানুষ জানছে নতুন ধরনের সাহিত্যকর্মের অনাস্বাদিতপূর্ব স্বাদ। এসময়ের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক আলেক্সানদার ফাদায়েভ ১৯০১-এ জন্ম। রুশ বিপ্লব দেখেছেন, দেখেছেন সদ্যোজাত সোভিয়েত ভূমিতে কসাকদের বিদ্রোহ এবং White Army-র সাথে বলশেভিকদের লড়াই। “Union of Soviet Writers”-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ফাদায়েভ এবং এর চেয়ারম্যান ছিলেন প্রায় দশ বছর – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পর্বে। দেখেছেন আত্মপরিচয়হীন একেবারে নগণ্য মানুষেরা কিভাবে নতুন রাশিয়াকে বুকে ধারণ করেছে। নতুন দেশকে বাঁচানোর জন্য চরমতম হিংস্র, ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া অত্যাচার সহ্য করেছে। ফাদায়েভের অধিক পরিচিত উপন্যাস The Rout এবং The Young Guard
সদ্য ভূমিষ্ঠ রাশিয়ার বিশেষ পটভূমিতে লেখা ফাদায়েভের একটি গল্প ডিকি বার্ড (Dicky Bird) – ১৯১৮-১৯-এর পটভূমিতে। আমি গল্পটির বাংলা রূপান্তর করছি। গল্পটি বর্তমান দুনিয়ার পাঠকদের কাছে নিতান্তই কম পঠিত।
ফাদায়েভের গল্পে যেমন রয়েছে এখনো তেমন রাষ্ট্র, পুলিস, সামরিকবাহিনী এবং “অবাধ্য” নাগরিকদের মধ্যেকার সম্পর্ক একইভাবে নির্মিত হয়, বিবর্তিত হয়, একই কাঠামোয় ধরা থাকে – সে সালটি ১৯১৮ হতে পারে, হতে পারে ২০১৮। এখানেই এই স্বল্প পরিচিত গল্পটির গুরুত্ব। এ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ইগন্যাটের মাঝে মিশে থাকে আমাদের বাংলার তিমির, দ্রোণাচার্য ঘোষ বা ভারতের অন্যপ্রান্তের অন্য সন্তানেরা, যেমন কদিন আগের কাশ্মীরের আসিফাএখনও ডিকি বার্ডের আখ্যানে ধরে রাখা বিবরণী সমান প্রাসঙ্গিক।]

পূর্ব সাইবেরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় সূচান কয়লাখনির কয়লাটানা শ্রমিক ইগন্যাট সায়েংকো তার বাড়ীতে ডিনামাইট লুকিয়ে রাখার জন্য ধরা পড়েছিল। সেই বাচ্চাবেলা থেকে ইগন্যাটের আদরের নাম ছিল “ডিকি বার্ড” বা খুদে পাখী। কারণটা হল দুনিয়ার সমস্ত পাখির স্বর সে অবিকল নকল করতে পারতো। আর সে দেখতেও ছিল একটা খুদে পাখিরই মতো। ইগন্যাট ছোটখাটো মানুষ – একটা লম্বা নাক, সরু ঘাড় আর চিরকাল মাথার উপর খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা চুল। সে বিয়ে করেছিল, দুটো বাচ্চা ছিল। আর বড়টা জন্মসূত্রে পেয়েছিল ইগন্যাটের এই নকল করার ক্ষমতা।
সমস্ত পড়শীকে মাঝরাতে আতঙ্কে জাগিয়ে তুলে গোয়েন্দাবাহিনীর লোকেরা গ্রেফতার করলো ইগন্যাটকে। যখন তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে তখন তার গিন্নী, তার সন্তানেরা, পাড়ার সমস্ত লোকজন আর তাদের কাচ্চাবাচ্চারা পিলপিল করে রাস্তায় নেমে এলো। তার নাম ধরে সবাই বারবার ডেকে ঊঠছিল। আর যতক্ষণ দেখা যায় ওকে হাত নেড়ে বিদায় জানালো ওকে, কারণ পাখীর মতো গাইতে পারতো বলে ওরা যে সবাই খুব ভালোবাসতো!
গোয়েন্দা দফতরের লোকেরা উঁচু বেড়া দিয়ে ঘেরা আগে যেখানে গ্রামের খড় রাখা হত সেই খড়-গাদার জায়গাটা দখল করেছিলো। ইগন্যাটকে একটা গোলা ঘরে ঢুকিয়ে তালা আটকে দিল। শুধু একটিবার ধূমপান করার জন্য আকুলিবিকুলি করতে করতে সেই ফাঁকা ঘরের মেঝেয় রাত কাবার করলো ইগন্যাট।

যখন ওর ঘরের মেঝের পাটাতনের নীচ থেকে ডিনামাইট বেরলো ইগন্যাট তখনই বুঝেছিল পরিস্থিতি মারাত্মক হবে। কেবলমাত্র কমরেডদেরকে ওর ঘরে ডিনামাইট লুকিয়ে রাখতে দেওয়ার অপরাধে ও অপরাধী। এটা তো নির্জলা সত্যি। যদিও এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ওর কোন যোগ নেই, তবুও নিজের ঘাড় বাঁচানোর জন্য কমরেডদের ঠাঁই না দেবার কথা ওর কখনও মনে হয়নি। নিজের বেঁচে থাকার জন্য অন্যের মৃত্যু ডেকে আনা ওর অকিঞ্চিৎকর জীবনে খুব অস্বাভাবিক, খুব ঘৃণ্য মনে হতো।
রাতের বাকী সময়টুকুতে সে যে অত্যাচারে ভেঙ্গে গিয়ে খবর বের করে দিতে পারে এ নিয়ে ওর খুব একটা দুর্ভাবনা ছিলো না। পৃথিবীর কোন কিছুই ওর মুখ খোলাতে পারবে না, কারণ সমস্ত কমরেডকে বিপদের বাইরে রেখে ও ঝকঝকে হয়ে বাঁচবে এ ভাবনাই ভরে রেখেছিল ওকে। ও মারা গেলে বাচ্ছাগুলোর কি হবে? এ চিন্তাটা ওকে বারেবারে বিব্রত করছিল। আর বেচারা বৌটার ভবিষ্যৎ ওকে দুঃখ দিচ্ছিল – “কেউ যে মেয়েটাকে আর বিয়ে করবে সে সম্ভাবনা কম। দুটো বাচ্চার বোঝা ঘাড়ে নিয়ে একে বিধবা, তায় ট্যাড়া, বেচারা!”
যে সার্জেন্ট ওকে ধরেছিল সে বড়োসড়ো চেহারার আর ঘন কালো চাপদাঁড়ি রয়েছে। তার সঙ্গে এলো আরেকটা বড়ো চেহারার লাল-চুলো হলদে-মুখো সেপাই। এরা দুজনে সকালবেলা ইগন্যাটকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেলো।

টেবিলের ওপারে বসে থাকা অফিসারটিকে যদিও ইগন্যাট চিনত না, এক ঝটকায় ওর মনে হল ঐ লোকটা মার্কেভিচ (মার্কেভিচের নাম জানে না এমন কি কেউ এ তল্লাটে আছে?)। এবারে একটা তিরতিরে আতঙ্ক ইগন্যাটকে চেপে ধরলো। কিন্তু অদ্ভুতভাবে মার্কেভিচ যখন তার নাম, ঠিকানা, ধর্ম ইত্যাদি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলো তখন সে ধীরে ধীরে নিজেকে ফিরে পেলো। মার্কেভিচ যখন জানতে চাইলো এ ডিনামাইটগুলো সে কোথা থেকে এবং কি জন্য পেয়েছে, ইগন্যাট উত্তর দিল মাছ মারবার জন্য সে এগুলো জোগাড় করেছে। একটা নোংরা হাসি ছড়িয়ে মার্কেভিচ জিজ্ঞেস করলো – “তাহলে তুমি শুধু মাছই খেতে চেয়েছিলে, কি বলো?”

একটুকরো হেসে ইগন্যাট বললো, “আমার দুটো বাচ্চা আছে, অনেকদিন মাইনে পাইনি। পেটে খিদের জ্বালা নিয়ে বাঁচা কি কষ্টকর আপনি নিশ্চয়ই বোঝেন।“
কোণের দিকে একটা চেয়ারে বসে থাকা সার্জেন্টকে চোখের ইঙ্গিত করে মার্কেভিচ বললো, “বুঝলে ও একটা মাছের দোকান খুলতে যাচ্ছিল। আধ মণ মতো মাছ, মন্দ নয় কি বলো?”
ইগন্যাট মেনে নিল যে ইঞ্জিনিয়ার আর কেরাণীদের কাছে মাছ বিক্রী করে সত্যি সত্যি সে কিছু উপরি টাকা আয় করার পরিকল্পনা করেছিল।

গোল হলদেটে চোখে ইগন্যাটের দিকে সোজাসুজি তাকিয়ে মার্কেভিচ জিজ্ঞাসা করল, “গত পরশু দিন কি কারণে টেরেন্টি শকোলভ তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিল?” হলদেটে চোখগুলো ভয়ঙ্কর – কারণ ওরা কোন কথা বলে না।
“- এ অসম্ভব খবর ও জানলো কি করে?” ইগন্যাট চিন্তিত হল, কিন্তু খুব দ্রুতই সামলে উঠে বিস্ময়ের রেখা ফুটে উঠলো মূখে। ঠিক বিস্ময় বলা যাবে না, বরঞ্চ এক অদ্ভুত শূণ্যতা ছিল তাতে।
ও বললো – “টেরেন্টি শকোলভ কে? এরকম কাউকে তো আমি চিনিনা
”ঠিক এক্ষুনি যদি ঐ লোকটাকে এনে হাজির করি তোমার সামনে! আর লোকটা যদি সবকিছু বলে ফেলে তাহলে কি করবে তুমি?”
কাঁধ ঝাঁকিয়ে ইগন্যাট উত্তর দিল – “লোকটার আর কি-ই বা বলার আছে তা আমি জানিনা।” ইগন্যাট জানতো মাড়ড়কেভীচেড় পক্ষে টেরেন্টি শকোলভকে হাজির করানো সম্ভব নয়। কারণ ঠিক গতকাল টেরেন্টির স্ত্রী পেরিয়াতিনো থেকে পাঠানো টেরেন্টির চিঠি পেয়েছে।

যেন ইগন্যাটেরই সাহায্যে লাগতে চায় এমন বন্ধুত্বপূর্ণ গলায় মার্কেভিচ বললো, “শোন, শকোলভ স্বীকার করেছে যে যেখান থেকে লালদস্যুদের কাছে ডিনামাইট গোপনে পাচার করা হয় তার মাঝপথেই তোমার বাড়ি। আমি বুঝি তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তুমি এ কাজে জড়িয়ে পড়েছ। যে লোকগুলো তোমায় এ অপকর্মে নামিয়েছে তাদের নাম যদি তুমি বলে দাও তাহলে আমি তোমায় ছেড়ে দেবো। আর নাম যদি না বল ……….
খুব আবেগ জড়ানো স্বরে ইগন্যাট বলে ফেললো – “ হুজুর, আমি জারের সেনাদলে সেবা করেছি আর জার্মান যুদ্ধে প্রথম থেকে শেষ অব্দি লড়েছি। কক্ষনো কোনদিন লালদের ব্যাপারে আমার কিছু করার ছিল না আর থাকতেও পারেনা। আমি জানি আমার ভয়ঙ্কর দারিদ্র্যের দরুণ মাছ মারার জন্য ডিনামাইট চুরি করা একটা অপরাধ। এই অপরাধের জন্য আমায় যদি আদালতে তুলতে চান তাহলে আপনার ইচ্ছাই থাকুক হুজুর!”

মার্কেভিচ উঠে দাঁড়ালো। ধীর পায়ে দুলতে দুলতে টেবিলটার পাশ দিয়ে সামনে এসে একটা গানের সুর শিষ দিয়ে গেয়ে উঠলো আর তারপর তার ভয়ঙ্কর ঘুষি আছড়ে পড়লো ইগন্যাটের মুখে। ইগন্যাট উড়ে গিয়ে পড়লো দেয়ালে। তার পিঠ দেয়ালে চেপে ধরে বিস্ময়ে আর ক্রোধে সে তাকালো মার্কেভিচের দিকে, তার নাক দিয়ে গড়িয়ে নামছে রক্ত।
তারপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মার্কেভিচ পেটাতে শুরু করলো। আর প্রতিবার পেটানোর সময় ইগন্যাটের মাথা ঠুকে দিতে লাগলো দেয়ালের সঙ্গে। ইগন্যাটের কথা বলার কোন সুযোগ ছিলোনা আর মার্কেভিচও তখন কোন কথা বলছিলো না। শুধু বিরামহীন ঘুষি চালিয়ে যাচ্ছিল যতক্ষণ না ইগন্যাটের দেহ ধপ করে গড়িয়ে পড়লো মেঝের ওপরে। এবার সেই সার্জেন্ট এবং সৈনিকটি তার হাত ধরে টেনে তুললো। ছ্যাঁচড়াতে ছ্যাঁচড়াতে নিয়ে গেলো ওই গোলাঘরে – আর এই পুরো পথটা জুড়ে ইগন্যাটের ওপরে এবং ওদের কাঁধ আর কনুই দিয়ে সমানে ঠুকে দিলো ওকে।

ইগন্যাটের মনে হল যেন বহুকাল ধরে পড়ে আছে সেখানে। অসহায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে জামার হাতা দিয়ে তার ফুলে ওঠা থ্যাঁতলানো মুখের দলা পাকানো ড়োক্ট মূছে দিচ্ছিল সে। এ পর্যন্ত যা ঘটে গেলো ভেবে যাচ্ছিলো ইগন্যাট; এই সময়ে মনে এলো তার বিরুদ্ধে বাস্তব কোন প্রমাণ নেই। খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরা এই চিন্তাই আবার আবার সাহস যোগালো তাকে। একটু কিছু খাবার আর একবার ধূমপান করার জন্য সে ব্যাকুল হয়ে উঠলো। কিন্তু কেউই এলো না ওই গোলাঘরের কাছে। চাতাল থেকেও এলো না কোন সাড়াশব্দ। গোটা দুনিয়ার সমস্ত যোগাযোগ থেকে সে বিচ্ছিন্ন – না আছে কেউ তার দুর্গতির কথা জানানোর জন্য, না আছে একটু সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য। হাতকে বালিশ করে ইগন্যাট এবার ঘুমিয়ে পড়লো।

গোলাঘরের তালা খোলার শব্দ তার ঘুম ভাঙ্গালো। এক ঝটকায় দরজা খুলে গেলো, ঝকঝকে রোদ্দুর আর বসন্তের সুঘ্রাণের দমক এলো গলাড় ভেতরে। তার সাথে এলো মার্কেভিচ আর ঐ সার্জেন্ট। কালো দাঁড়িওয়ালা সার্জেন্ট মুঠোয় শক্ত করে চাবি ধরে রেখে দাঁড়িয়ে থাকলো খোলা দরজার পাশে, মার্কেভিচ লম্বা লম্বা পা ফেলে এগিয়ে গেলো ইগন্যাটের দিকে। মেঝে থেকে তার সতর্ক পাখির ইগন্যাট অপলকে তাকিয়ে রইলো মার্কেভিচের দিকে।
“এখনও মুখ খোলার ইচ্ছে নেই?” – মার্কেভিচ জানতে চাইলো। হঠাৎ ভয়ঙ্কর ক্রোধে তীক্ষ্ণ চিৎকার করে সে সপাটে লাথি মারলো ইগন্যাটের পেটে।

একহাতে পেট আঁকড়ে ধরে আর একটা দিয়ে মুখ আড়াল করে ইগন্যাট তার পায়ে ভর দিয়ে লাফিয়ে উঠলো।
“তোর কাছে ডিনামাইট কে এনে দিয়েছে? হয় মুখ খুলবি নয় তোকে খতম করে ফেলবো।” ইগন্যাট মার্কেভিচের তীব্র হিসহিসে স্বর শুনতে পেলো।
এক দলা থুতু ছিটিয়ে মার্কেভিচ তার রিভলভার টেনে বের করে এগোতে থাকলো ইগন্যাটের দিকে।
একটা বাচ্চার মতো রিনরিনে গলায় ইগন্যাটের সুতীক্ষ্ণ চিৎকার এলো – “আমায় মেরে ফেল, মেরে ফেল আমায়। আমি জানিনা তোমরা কি জানতে চাইছো?”

মার্কেভিচ নির্দেশ দিলো – “ওকে বাইরে নিয়ে এসো।” চাতালে অপেক্ষারত সৈনিকটিকে সার্জেন্ট চেঁচিয়ে ডাকলো। আর দুজনে মিলে সদ্যগজানো কচি ঘাস মাড়িয়ে ইগন্যাটকে নিয়ে এলো লম্বা মাটির নীচের কুঠুরীতে – যেটার ওপরে রয়েছে কাঁটাঝোপ গজানো মাটির ছাদ। বাতাস ঢোকার জন্য কাঠের তৈরি ফুটো একখানা। আর মাঝখানে যেন আঠা দিয়ে লাগানো ড়োয়েছে একটা টিনের চিমনি।
ভয়ার্ত স্বরে আর ইগন্যাট জিজ্ঞাসা করলো – “তোমরা আমাকে কোথায় নিয়ে চললে?”

কেউ কোন জবাব দিলো না। ধাক্কা মেরে দরজা খুলবার আগে মার্কেভিচ তালাটার ওপরে কিছুক্ষণ অসংলগ্নভাবে হাতড়ালো। মাটির নীচের কুঠরি থেকে ভকভকিয়ে উঠলো স্যাঁতস্যাঁতে ভ্যাপসা গন্ধ। ইগন্যাটকে ধাক্কা দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামালো। শ্যাঁওলা ধরা কাঠের গুঁড়ি দিয়ে বানানো দেয়ালে একটুর জন্য ইগন্যাটের মাথা ঠোক্কর খেতে গিয়ে বেঁচে গেলো। সে আছড়ে পড়লো দাঁড় করিয়ে রাখা কতকগুলো পিপের পাশে।
মার্কেভিচ একটা বাতি জ্বালালো, অন্য একটা দরজা খুললো আড় পাশের আরেকটা খোপে গিয়ে ঢুকলো। ইগন্যাটের ভেঙ্গে পড়া শরীর এতক্ষণ যে সার্জেন্ট আর সৈনিকটি ধরে ছিলো তারা এবার ওকে টানতে টানতে নিয়ে এলো সেই স্যাঁতস্যাঁতে আলোহীন কুঠুরীতে। বমি উঠে আসা দুর্গন্ধের সাথে মিশে ছিল পুরনো ঘরের ভ্যাপসা গন্ধ।

গুঁড়ি দিয়ে বানানো আরেকটা কাঠের দেয়াল ছিলো দূরবর্তী কোণে। ওতেও ছিলো একটা তালাবন্ধ দরজা। ঘরের মধ্যিখানটায় ছিলো একটা বেঞ্চ আর কোণের দিকে পাথর দিয়ে বানানো একটা জ্বলন্ত চুল্লী যার ওপরে ঝুলছিলো একটা কালো হাপর। অদ্ভুত দেখতে কয়েকটা আঁকশি লাগানো ছিলো দেয়ালে আর ছাদ থেকে ঝুলছিলো কয়েকটা দড়ি।
দরজাটাকে আড়াল করে মার্কেভিচ ইগন্যাটের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। ইগন্যাটের বুকের জামা খিমচে ধরে দাঁত কিড়মিড় করে গর্জন করে উঠলো – “তুই কথা বলবি কি না?”

গম্ভীর নীচু গলায় ইগন্যাট জবাব দিলো – “তোমরা আমায় অত্যাচার করছো কেন? এর চেয়ে মেরে ফেলা ভালো।”
মার্কেভিচ নির্দেশ দিলো – “ওর জামাকাপড় খুলে নাও।”
সেই সৈনিক আর সার্জেন্টের খপ্পর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার যুদ্ধ করতে করতে ইগন্যাট আতঙ্কিত গলায় জিজ্ঞেস করলো – “তোমরা আমায় নিয়ে কি করতে চাইছো?” কিন্তু ওরা তার ওপরে এলোপাথারি ঘুষি চালিয়ে গেলো। আর ছিঁড়ে ফালাফালা করে দিলো ওর সমস্ত জামাকাপড়। অনবরত লাথি চালিয়ে আর হাত মুচড়ে ওরা ওকে বেঞ্চের ওপরে শুইয়ে দিলো – একদম উলঙ্গ অবস্থায়। ইগন্যাট অনুভব করছিলো তার হাত, পা, ঘাড় সবকিছুই সাপের মতো দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে শক্ত করে বেঁধে ফেলা হলো বেঞ্চের সঙ্গে। শরীরটা একটুখানি শক্ত করলেই গলার দড়ির ফাঁস চেপে বসে শ্বাস আটকে দিচ্ছিলো ইগন্যাটের।

লাঠিটা তার ওপরে হিসহিসিয়ে উঠলো এবং প্রথম ছোবল দেওয়া আঘাত হাড় অবধি কেটে বসে গেলো।
সেই মুহূর্ত থেকে শুরু হল ইগন্যাটের এক নতুন ভয়াবহ জীবন। মানুষের বিবেক আর যুক্তি দিয়ে যতোটুকু বোঝা যায় সেসবকিছুর বাইরে সীমাহীন, বিরামহীন অত্যাচার এবং অত্যাচারের দুঃস্বপ্নের রাত মিশে গেলো সে জীবনে।
একটুখানি বিরিতি দিয়ে টানা কয়েকদিন ধরে শুধু অত্যাচার চললো তার ওপরে। কিন্তু মাটির নীচের সেই অন্ধকার কুঠুরীতে সে দিন আর রাতের হিসেব হারিয়ে ফেলছিলো। তার কাছে সময় ভাগ হয়ে গেলো পালা করে ঘুরে আসা শরীরের ওপর অসহ্য অত্যাচার কিংবা পাশের ছোট্ট, বন্ধ, অন্ধকার, ভ্যাপসা কুঠুরীতে পড়ে থাকার সুযোগ – এ দুয়ের মাঝে। ওই পড়ে থাকার সময়ে সে হয় ঘুমিয়ে পড়তো কিংবা জ্বোরো রোগীর মতো অতীত জীবনের টুকরো টুকরো ছবি সে দেখতে পেতো চোখের সামনে।

মাঝে মাঝে তার কাছে মুহূর্তগুলো অসম্ভব পরিষ্কার হয়ে যেতো। এই সময়গুলো তার কাছে ছিলো যন্ত্রণাদায়ক বিস্ফোরণের মতো – যখন তার মনে হতো যা কিছু ঘটে যাচ্ছে সেসবকিছু সে এক মুহূর্তে বুঝে উঠতে পারবে আর গোটা জীবনের ঘটনাগুলোকে সে সাজিয়ে ফেলতে পারবে তার মনে। কিন্তু এরকম একটিক্ষণের আনন্দলহরী জন্ম নেবার মুহূর্তেই মুছে যেতো – মুছে দিত মার্কেভিচের হিংস্র মুখ, সার্জেন্টের ঘাড় খোলা জামা, যার ফাঁক দিয়ে তার রোমশ বুক দেখা যেতো আর দেখা যেতো ক্রুশ ঝোলানো সুতো। মুছে দিত চুল্লী থেকে বেরনো আগুনের ঝলক, চুল্লীর উপরকার হাপরের শোঁ শোঁ শব্দ, তার নিজের হাড় গুঁড়ো হওয়ার আওয়াজ, আর মুছে দিত তার নিজের রক্ত এবং পোড়া মাংসের কটু গন্ধ।
ইগন্যাটের শরীর ক্রমশই অত্যাচারে আরো বেশী করে অনুভূতিহীন হয়ে যাচ্ছিল। তাই মাথা খাটিয়ে নিত্য নতুন অত্যাচার বের করা হতো যাতে যে বস্তুটা এখন আর কোনভাবেই মানুষের শরীর বলে কোনভাবেই মনে হয় না সেখান থেকে অত্যাচারের প্রতিক্রিয়া বোজাহ যেতে পারে। কিন্তু এত করেও সে আর কখনোই আর্ত চীৎকার করলো না। একটি কথাই বারবার বলে গেলো – “আমায় মেরে ফেল, আমার কোন অপরাধ নেই……..”

একবার তার ওপরে যখন অত্যাচার চলছিলো সাদা পোষাকের একজন মেয়েমানুষ সেই অত্যাচার কক্ষে এসে ঢুকলো। দেয়ালের আঁকশিতে বাঁধা অবস্থায় ইগন্যাট তাকে ঢোকার সময়ে দেখেনি। ওইখানে ঐ মেয়েমানুষটির উপস্থিতি এতটাই অবিশ্বাস্য যে তার মনে হলো হয় সে ঘোরের মধ্যে রয়েছে কিংবা মাথার স্বাভাবিকতা হারিয়েছে। কিন্তু সে মেয়েমানুষটি এলো আর ইগন্যাটের উল্টোদিকের বেঞ্চে বসে রইলো, এবং তাকিয়ে থাকলো।
একটাও কথা না বলে কিংবা একটুও না নড়ে সে বসে রইলো এবং যে লোকটা ইগন্যাটের ওপর অত্যাচার করে যাচ্ছিলো তাকে বড়ো বড়ো শূণ্য নীল চোখে লক্ষ্য করে গেলো। এবং তক্ষুনি হঠাৎ ইগন্যাট চিনে ফেললো ঐ মেয়েমানুষটিকে – এ তো মার্কেভিচের বৌ।
এটা কোন দেখার ভুল নয়, একটা জীবন্ত মেয়েমানুষ। এবার তার উপলব্ধিতে এলো এবং ওর মাঝে আতঙ্কের সঞ্চার হলো – যা কিছু ঘটে চলেছে তার ওপরে তাতো কোন দুঃস্বপ্ন নয়, আর অসুস্থ মনের কোন কল্পনাও নয়, এক জীবন্ত বাস্তব।
আর সেই মুহূর্তেই তার অকিঞ্চিৎকর জীবনের সমস্ত অতীত এবং বর্তমান এক শক্তিময় চিন্তার কিরণে অকস্মাৎ আলো ঝলমলে হয়ে উঠলো – তার মাঝে জন্ম নেওয়া সবচাইতে বড়ো, সবচাইতে গুরুত্বশালী চিন্তার কিরণ।
তার স্মরণে আসতে লাগলো তার স্ত্রীর কথা, যে বেচারা হাড়ভাঙ্গা খাটুনী আর অনটনের বাইরে জীবনে কখনো কিছু জানলো না। স্মরণে এলো তার রক্তহীন, ঘেয়ো বাচ্চাগুলোর কথা, স্মরণে এলো গোটা জীবনটাই – একজন মজুরের ভয়াবহ জীবন, ছোটোখাটো নানা অপরাধে যুক্ত অজ্ঞ একটা মানুষ যার জীবনের সবচাইতে সুখের জিনিস ছিলো সে যে এই নীলনীলিমার আদরের ছোট প্রাণকণা ক্ষুদে পাখিগুলোকে বুঝতে পারে, পারে তাদের সঙ্গীত অনুকরণ করতে আর এজন্য যে এলাকার সমস্ত বাচ্চাই ওকে ভালোবাসে। তাহলে এটা কি করে সম্ভব যে যে মানুষেরা এই পৃথিবীর সমস্ত আশীর্বাদ এবং সৌন্দর্য্য পেয়েছে তাদের জীবনে – উষ্ণ আরামদায়ক ঘর, পেটভরানো খাবাড়, মোণ কেরে নেওয়া পোষাক, বই, গান-বাজনা, ফুলের বাগান – তারা তার শরীরের ওপরে এধরনের বর্বর, বীভৎস, ছিন্নভিন্ন করা অত্যাচার চালাতে পারে!
উত্তরটা হল – তাদের জীবনের পূর্ণতার আশীর্বাদ নিয়ে এই মানুষগুলো বড়ো বেশী আত্মতৃপ্ত, এবং এজন্য এরা আর মানুষ নেই। এদের মাঝে একমাত্র মানুষ সে, ইগন্যাট, এবং এ কারণেই ওরা তাকে ক্ষমা করতে পারছিলো না। সে জানে মানুষের হাত আর মস্তিস্ক দিয়ে গড়ে তোলা সমস্তকিছুর অসীম মূল্য এবং সে যে পৃথিবীর এই আশীর্বাদ ও সৌন্দর্য্য তার জীবনে, এই মাটিতে বেড়ে ওঠা সমস্ত মানব সন্তানের জীবনে ফিরে পাওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছে।
ইগন্যাট বুঝলো ওদের মাঝে একটুখানিও মানবিক বলে যা মনে হচ্ছিলো, মানুষের ভালোর জন্য কিছু করতে চায় বলে মনে হচ্ছিলো তা পুরোটাই ভাঁওতা, এক বিরাট মিথ্যে। তাদের অস্তিত্বের আসল জিনিসটা ধরা পড়েছে এইখানে, এই অন্ধকার মাটির নীচের কুঠুরীতে, যেখানে তার চামড়া ফালা করে কেটে পুড়িয়ে দিচ্ছে, বেঁধে রাখছে দেয়ালের আঁকশিতে – তাদের জীবনের একমাত্র আসল জিনিস এটাই।

অসম্ভব এক দুঃখ হতে লাগলো তার। এই সমস্ত কিছু সে জেনেছে কিন্তু আর কোনদিন জীবিত মানুষের কাছে বলে যেতে পারবে না। তার কাছে যা স্পষ্ট হয়ে গেছে কোনদিন তার কমরেডদের কাছে সে আর বলতে পারবে না। তার একটানা অস্বস্তি হচ্ছিল একথা ভেবে যে তার যে কমরেডরা মাটির ওপরে বেঁচে আছে এবং লড়াই চালাচ্ছে তারা পুরোপুরি বুঝতে পারবে না ও কতোটুকু করতে পেরেছে। আরেকটা শঙ্কাও মাঝে মাঝে বুড়বুড়ি তার মধ্যে। বিজয়ের নির্ধারক দিনে তার কমরেডদের হৃদয় দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং এ অমানুষ দানবগুলোকে ক্ষমাও করে দিতে পারে। তাহলে এই অমানুষ দানবেরা আবার তাদের হারিয়ে দেবে, গুঁড়িয়ে দেবে এই পৃথিবীর সমস্ত জীবন্ত অস্তিত্বকে।

দেয়ালে ক্রুশবিদ্ধ অবস্থায় ইগন্যাট তাকালো মার্কেভিচের ওপর – ওর দেহখানা মনে হচ্ছে একটা ছোট্ট শরীর যাতে লেগে রয়েছে একখানা ঘর্মাক্ত বিবর্ণ উন্মত্ত মুখ, ওর সামন কেন্নোর মতো কিলবিল করছে কিসব যেন যেগুলো ওর শরীরে ঢোকার চেষ্টা করছে। ও তাকালো সেই মেয়েমানুষটার দিকে – বেঞ্চের ওপর জবুথবু হয়ে বসে থাকা একটা সাদা কীটের মতো, চুল্লীর গাঢ় লাল আভা এসে পড়েছে ওর ওপরে, আর ওর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
বুকের গভীর থেকে পল্লবিত হয়ে ওঠা এক পরম মুক্তির অমোঘ শক্তি অনুভব করলো ইগন্যাট।

শান্ত কিন্তু অসম্ভব পরিষ্কার স্বরে ইগন্যাট জানালো – “তোমরা ঘামছো কেন? আমার কাছ থেকে আর কিছু তোমরা জানতে পারবে না। তোমরা মানুষ নও। নাকি নিজেদের তাই মনে করো তোমরা? এমনকি তোমরা পশুও নও, তোমরা কয়েকটা উন্মত্ত জীব। খুব শীগগিরিই তোমাদের কেটে কেটে খতম করে ফেলা হবে।” বিজয়দৃপ্ত গলায় এ কথাগুলি সে উচ্চারণ করলো আর ঝলসে যাওয়া ভ্রু, চোখের পাতার লোম আঁকা ফুলে ওঠা রক্তাক্ত মুখ একটুখানি ফাঁক হয়ে ছড়িয়ে পড়লো এক ভয়ঙ্কর হাসি।
উন্মাদের মতো মুখ খিঁচিয়ে এক পেল্লায় চিমটে দিয়ে মার্কেভিচ আঘাত করলো তার মাথার ওপরে। ইগন্যাট তো ইতিমধ্যেই ব্যথায় অনুভূতিহীন হয়ে গেছে। সেই ভয় ধরানো হাসি নিয়ে সে সোজা তাকিয়েই রইলো মার্কেভিচের দিকে। আর তখন মার্কেভিচ এক তীক্ষ্ণ চীৎকার করে ছুটে গেলো চুল্লীর দিকে, চিমটে দিয়ে ধরলো একটা গলন্ত লোহার টুকরো আর ইগন্যাটের দিকে পাক খেয়ে প্রথমে একটা চোখে তারপর আরেকটায় ভীষণ জোরে গেঁথে দিলো সেই চিমটে।
গলন্ত লোহা গড়িয়ে পড়ছিলো বলে ইগন্যাটের শরীর দুবার কেঁপে কেঁপে উঠলো, আর তারপর সেই আঁকশি থেকে নড়বড়েভাবে ঝুলতে থাকলো তার দেহ।

ইগন্যাটের মৃত্যু হলো।



7 comments:

  1. 2018 কি নির্মম সত্য

    ReplyDelete
  2. মূল লেখাটা পড়ি নি।
    তাই অনুবাদের মান নিয়ে মন্তব্য করা অনুচিত হবে।
    কিন্তু এই গল্পটা তো অনবদ্য। এবং বাংলা লেখার মান এবং গতি উচ্চমানের।
    ডঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্যকে ধন্যবাদ এই লেখাটা সাধারণের গোচরে আনার জন্য।

    ReplyDelete
  3. আন্তরিক ধন্যবাদ!

    ReplyDelete
  4. খুব ভালো লাগল।এটি আপনার এক সুন্দর কাজ। অনুবাদ ভালো হয়েছে। ইগন‍্যান্ট এর শেষের দিকের অনুভূতি----- সে(ইগন‍্যান্ট)যে ভাবে দেশের জন্য কাজ করছে এবং অত‍্যাচার সহ‍্য করছে সেই কথা বিপ্লবীরা ও দেশবাসীরা জানবে না; বিপ্লবীরা জয়ী হলে তাঁরা হয়তো অত‍্যাচারীদের ক্ষমা করে দেবে এবং তার ফলে দেশ আবার অত‍্যাচারের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হবে----ইত্যাদি বড়ই বেদনাদায়ক অনুভূতি সৃষ্টি করে, কিন্তু এটাই বাস্তব।
    আমার অনুরোধ আপনি এই ধরনের কাজ নিয়ে বেশি করে নিজেকে মগ্ন রাখুন।

    ReplyDelete
  5. The comment above is from a reader who does not have email account. He sent to me his comments. I have published on his behalf.

    ReplyDelete

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে