Saturday, October 13, 2018

শুনতারো তানিকাওয়ার কবিতা ইংরিজি থেকে অনুবাদঃ শৌভ চট্টোপাধ্যায়






জাপানি কবি ও অনুবাদক শুনতারো তানিকাওয়ার জন্ম ১৯৩১ সালে, টোকিও শহরে। তাঁর নিজের কথায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী জাপানের বৌদ্ধিক ও আত্মিক সংকট তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। আর কবিতাই হয়ে উঠেছিল, তাঁর ক্ষেত্রে, সেই সংকট থেকে মুক্তির অন্যতম উপায়। প্রথাগত জাপানি কবিতার বিপ্রতীপে, তানিকাওয়ার লেখালিখির নিরীক্ষামূলক চরিত্রের সঙ্গে, হয়তো এই পটভূমির একটা যোগাযোগ রয়েছে। তাঁর কবিতায় আঙ্গিকগত নিরীক্ষা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে একধরণের ব্যক্তিগত অধ্যাত্মবাদ। তাঁর কবিতা উচ্চকিত নয়, বরং শান্ত ও গভীর। ১৯৫২ সালে তাঁর প্রথম কবিতার বই “দু’লক্ষ কোটি আলোকবর্ষের নিঃসঙ্গতা” প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই প্রবল জনপ্রিয় হয় এবং আজও তার জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। এ পর্যন্ত প্রকাশিত তাঁর কবিতা-বইয়ের সংখ্যা ষাটের অধিক। তাঁর কবিতা চীনা, কোরীয়, মঙ্গোলীয় ছাড়াও একাধিক ইয়োরোপীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বর্তমান কবিতাগুলি ইংরিজিতে অনূদিত তানিকাওয়ার কবিতাসংকলন “নতুন নির্বাচিত কবিতা” (অনুঃ উইলিয়ম ইলিয়ট ও কাজুও কাওয়ামুরা) থেকে গৃহীত।




দু’লক্ষ কোটি আলোকবর্ষের নিঃসঙ্গতা

এই ছোট্ট গ্রহটিতে বসবাসকারী মানুষজন
ঘুমোয়, জাগে, কাজে বেরোয়, আর মাঝেমধ্যে
মঙ্গলগ্রহে বন্ধুর জন্যে হাপিত্যেশ করে।

আমি জানি না
মঙ্গলের লোকজন তাদের ছোট্ট গ্রহটিতে বসে কী করে
(হ্রেষাহর্ষণ, না ক্রেংকারণ, না কি বাগবিজৃম্ভণ)
কিন্তু মাঝেমধ্যে তারাও চায় পৃথিবীতে তাদের বন্ধু হোক
কোনো সন্দেহ নেই এ ব্যাপারে

বিশ্বজনীন মহাকর্ষ আসলে আমাদের একাকীত্বের
অনিবার্য পারস্পরিক টান।

যেহেতু ব্রহ্মাণ্ড খানিকটা বাঁকাচোরা, তাই
আমরা সবাই একে অপরকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।

যেহেতু ব্রহ্মাণ্ড ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে, তাই
আমরা সবাই কিছুটা উদ্বিগ্ন।

দু’লক্ষ কোটি আলোকবর্ষের এই হাড়কাঁপানো নিঃসঙ্গতায়
আমি হঠাৎ হেঁচে উঠি।




সন্ধ্যে

পাশের ফাঁকা ঘরে
কে যেন কাকে ডাকছে, ঠিক আমার মতো

আচমকা দরজা খুলি।
যদিও এখানে অন্ধকার
ও-ঘরে থইথই করছে সূর্যের আলো।
যেন কেউ সবেমাত্র ঘর ছেড়ে বেরিয়েছে,
আশেপাশে তখনও ভেসে বেড়াচ্ছে তার লাজুক ছায়াটি
অথচ যেই আমি তাকে ধরতে যাই, কোথাও কেউ নেই
ভীষণ শাদামাটা একটা সন্ধ্যে নামছে

ধুলো জমছে ফুলদানির গায়ে
জানলা খুলতেই ঝলমলে আকাশ, আর সেখানেও
কে যেন কাকে ডাকছে, ঠিক আমার মতো।



“বাষট্টিখানা চতুর্দশপদী” থেকে

৪৫.

ভীষণ হাওয়ার মধ্যে
পৃথিবীকে ঘুড়ি বলে মনে হয়
এমনকী দুপুরবেলা, সারাক্ষণ
রাত্তিরের কথা ভাবি।

সেই অস্থির হাওয়া, শব্দহীন,
চারিদিকে ছুটে-ছুটে মরে।
আমি ভাবি, অন্য কোনো নক্ষত্রের হাওয়া—
ওরা কি বন্ধু হতে পারে?

আমাদের পৃথিবীতে রাত আছে, দিন আছে
সেই সময়ে, অন্য সব তারাগুলো কোথায়, কী করছে?

কীভাবে তারা সহ্য করে এই নিঃশব্দ বিস্ফার?
নীল আকাশ আসলে ডাহা মিথ্যুক
যখন ঘুমোই, রাত্রি এসে চুপিচুপি সত্যিটা বলে দিয়ে যায়
তারপর ভোরবেলা উঠে আমরা বলাবলি করি, স্বপ্ন দেখছিলাম।





মধ্যরাতের হেঁশেলে আমি শুধু তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই

.

এবার আমি তোমাকে একটা পোস্টকার্ড পাঠাব,
বলব আমি ভালো আছি;
অথচ কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়।
মানে, আমি খারাপ নেই তা বলে
সত্যিটা, আসলে এ-দুটোর মাঝামাঝি কিছু;
নিরপেক্ষ, হয়তো তুমি সে-কথাই বলবে।
নিরপেক্ষ হওয়া?
একদলা রেশমি নৈরাশ্যকে ধরে রেখেছে একরত্তি আশা।
ঠিক যেন রোববারের চিড়িয়াখানা
মানুষে আর বাঁদরে থিকথিক করছে
সে যাই হোক, এবার আমি তোমাকে একটা পোস্টকার্ড লিখব।
একচুমুকে খেয়ে ফেলব আমার কোক আর বলব সব ঠিক আছে।
যদিও আমাদের মধ্যে কে যে আসলে বেড়াতে গেছে
সেটা দিনকে দিন ক্রমশ আরো অস্পষ্ট হয়ে আসছে।

তাড়াহুড়োয়...

2 comments:

  1. সুন্দর অনুবাদ।

    ReplyDelete
  2. অসম্ভব সূক্ষ্ম এই কবিতার ভেতর জগৎ। আরো কিছু কবিতা বাংলায় অনুবাদ হওয়ার অনুরোধ রাখলাম।

    ReplyDelete

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে