গ্যাব্রিয়েল ওকারা
কবি পরিচিতিঃ
পুরো
নাম গ্যাব্রিয়েল ইমোমতিমি জিবাবা ওকারা, তবে গ্যাব্রিয়েল ওকারা নামে সমধিক পরিচিত।
জন্ম ২৪ এপ্রিল, ১৯২১। নাইজিরিয় কবি এবং উপন্যাসিক। তাঁর হাতেই আফ্রিকার প্রথম
আধুনিক কবিতার সূত্রপাত বলা হয়ে থাকে। তাঁর সর্বাধিক প্রচারিত উপন্যাস ‘দ্য ভয়েস’(১৯৬৪)
এবং ১৯৭৯ সালে কমনওয়েলথ কবিতা পুরস্কারে ভূষিত কাব্যগ্রন্থ ‘দ্য ফিসারম্যানস্ ইনভোকেশন’(১৯৭৮)।
লেখাপড়ার
শেষে প্রথম জীবনে কিছুদিন বিমান-কর্মী রূপে কাজ করলেও ১৯৪৫ সাল থেকে নাইজিরিয়া
সরকারী প্রকাশনা সংস্থায় মুদ্রক ও বাঁধাই-কারের কাজ করেন। স্থানীয় ‘ইজাও’ ভাষার
কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করার মাধ্যমে এই সময় থেকেই তাঁর লেখালিখির শুরু।
পরবর্তীকালে সাংবাদিকতায় ডিগ্রি নিয়ে সরকারের অধীন তথ্য অধিকর্তার পদে ছিলেন।
১৯৬৭-১৯৭০ এ ঘটা নাইজিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় তাঁর অনেক অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি বিনষ্ট
হয়ে গেছে।
তাঁর
কবিতা বহু ভাষায় অনুবাদিত হলেও আফ্রিকার সাহিত্যে ওকারা তাঁর যোগ্য সম্মান পাননি
বলেই অনেকের ধারণা। কেউ কেউ বলেন, তিনি কখনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত না
থাকার কারনেই এমনটা হয়েছে।
ওকারা
তাঁর লেখায় আফ্রিকান চেতনা, ধর্ম, লোকসংস্কৃতি এবং ইমেজারির যথেচ্ছ প্রয়োগ
ঘটিয়েছেন। আফ্রিকার ঐতিহ্যের সঙ্গে নবাগত ইউরোপীয় সভ্যতার সংঘাত তাঁর এক প্রিয়
বিষয়। যেমন, তাঁর একটি বহুপঠিত কবিতা ‘পিয়ানো এবং মাদল’ এ একদিকে আরণ্যক মাদলের
আদিম সরল তাল, আর অন্যদিকে, সভ্যজগতের বাজনা পিয়ানোর জটিল সুরের দ্বন্দ্বের
মাধ্যমে তিনি হারিয়ে যেতে বসা আফ্রিকার ঐতিহ্য আর আমদানিকৃত ইউরোপীয় সংস্কৃতির
দ্বন্দ্ব সুন্দর ইমেজারির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন।
আমার
নিজের অবশ্য বেশি প্রিয় পুত্রকে এক পিতার জবানীতে লেখা ‘পূর্বে কোনও একসময়’।
তাঁর
জীবনী এবং এই মূল কবিতাগুলি ইন্টারনেট-এ সুলভ। কেবল এই বাংলা অনুবাদগুলি ছাড়া।
কেননা এগুলিই শুধু মৎকৃত। পাঠক সহায় হউন।
১
পূর্বে কোনও
একসময়
পূর্বে কোনও
একসময়, খোকা,
তারা হাসত
তাদের হৃদয় দিয়ে
আর হাসত তাদের
চোখ দিয়ে;
কিন্তু এখন
তারা কেবল দাঁত দিয়ে হাসে,
আর তাদের
বরফ-শীতল দৃষ্টি
তল্লাসী
চালাতে থাকে আমার ছায়ার পিছনে।
প্রকৃতপক্ষে,
সে এক সময় ছিল,
তারা করমর্দন
করত তাদের হৃদয় দিয়ে,
কিন্তু সে দিন
চলে গেছে, খোকা।
এখন তারা হৃদয়
ছাড়াই করমর্দন করে
আর তাদের বাম
হাত হাতড়াতে থাকে
আমার শূণ্য
পকেট।
তারা বলে-
‘বাড়ির মতো ভেবো’, ‘আবার এসো’।
আর যখন আমি
আবার আসি
তাদের বাড়িকে
নিজের বাড়ির মতো ভাবতে পারি
কেবলমাত্র
একবার বা দুবার,
তিন বারের
বেলায় দেখি
তাদের দরজা
আমার জন্য বন্ধ।
আমি তাই অনেক
কিছুই শিখে নিয়েছি, খোকা।
শিখে নিয়েছি,
প্রতিকৃতির স্থির হাসির মতো
উপযুক্ত
ক্ষেত্রে উপযুক্ত হাসিটি মুখে এঁটে নিয়ে
বিভিন্ন
পোশাকের মতো ভিন্ন ভিন্ন মুখ
পরে নিতে –
বাড়ির মুখ, অফিসের মুখ,
রাস্তার মুখ,
নিমন্ত্রণ-কর্তার মুখ,
ককটেল পার্টির
মুখ।
আমিও শিখে
নিয়েছি
কেবলমাত্র
দাঁত দিয়ে হাসতে,
আর হৃদয় ছাড়াই
করমর্দন করতে।
আমিও শিখে
নিয়েছি হাসিমুখে বিদায় শুভেচ্ছা জানাতে
যখন মনে মনে
বলেছি – ‘বাঁচা গেল’!
আদৌ খুশি না
হয়েও
বলতে শিখেছি –
‘দেখা হয়ে আনন্দ পেলাম’,
অথবা দারুণ
বিরক্ত হওয়ার পরেও বলতে শিখেছি-
‘আপনার সঙ্গে
কথা বলে ভাল লাগল’।
কিন্তু
বিশ্বাস কর, খোকা,
যখন আমি তোর
মতো ছিলাম
তখন যেরকম
ছিলাম, আমি তেমনই হতে চাই।
আমি ভুলে যেতে
চাই এইসব বোবা জিনিসগুলো।
সর্বোপরি, আমি
পুনরায় শিখতে চাই
কীভাবে হাসতে
হয়,
কেননা এখন
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাসলে
সাপের
উন্মুক্ত বিষ দাঁতের মতো
আমারও শুধু
দাঁতগুলোই দেখা যায়!
তাই খোকা,তুই
আমায় দেখা
কীভাবে হাসতে
হয়; দেখা আমাকে
কীভাবে আমি
জোরে আর মুচকি হাসি হাসতাম
পূর্বে কোনও
এক সময়
যখন আমি তোর
মতো ছিলাম।
২।
পিয়ানো আর মাদল
যখন
দিনের শুরুতে এক নদীর ধারে
আমি
শুনি আরণ্যের মাদল তার-যোগে পাঠাচ্ছে
অতীন্দ্রিয়
তাল – জরুরী, রক্ত ঝরা মাংসের মতো টাটকা
যা
আদিম যৌবনের সূচনা ঘোষিত করে
আমি
দেখি ঝাঁপ দিতে উদ্যত এক প্যান্থার
লাফ
দেওয়ার প্রাক-মুহূর্তে লেপার্ডের দাঁত খিঁচানো
আর
বল্লম তাক করে গুঁড়ি মেরে থাকা শিকারী;
আর
আমার রক্ত আলোড়িত হয়, তীব্র স্রোতে
উলটে
যায় সময়, আর তৎক্ষণাৎ আমি
যেন
মায়ের কোলে দুগ্ধপোষ্য শিশুটি;
তৎক্ষণাৎ
কোনরকম অভিনবত্ব ছাড়াই
আমি
এক সরল পথে হাঁটি – যা অমসৃণ,
দ্রুত
পায়ের নগ্ন উষ্ণতা আর সবুজ পাতা ও বুনো ফুলের স্পন্দনের মধ্যে
অন্ধের
মতো হাতড়ানো হৃদয়ের উপযুক্ত।
তখনই
আমি শুনতে পাই এক বিলাপরত
পিয়ানো
থেকে জটিল ভাবে বেরনো
কান্নাভাঙা
একক গানের স্বরলিপি;
যা
অনেক দূর দেশ থেকে ভেসে আসে আর
মনোমুগ্ধকর
খাদ আর চড়া বিভিন্ন সুরের সংমিশ্রণে
এক
নতুন দিগন্ত খুলে দেয়
কিন্তু
নিজেরই জটিলতার গোলকধাঁধায় হারিয়ে
এক
বাগবৈশিষ্ট্যের মধ্যপথে যেন
একদম
ছুরির ডগায় এসে থেমে যায়।
আর
নদীর ধারে আমি এক যুগের
ভোরের
কুয়াশার মধ্যে হারিয়ে যাই,
একদিকে
অরণ্যের মাদলের অতীন্দ্রিয় তাল
অন্যদিকে
একক বাজনার স্বরলিপির মধ্যে
পথ
হারিয়ে ঘুরতে থাকি।
৩।
নিগূঢ় মাদল
আমার বুকের
ভেতর বাজে নিগূঢ় মাদল
আর মাদলের
তালে নাচে নদীর মাছেরা
মাটিতেও নাচে
যত পুরুষ-নারীর দল
কিন্তু গাছের
পিছনটিতে দাঁড়িয়ে সেই মেয়ে,
কোমরে যার
পাতার পোশাক পরা,
একটু শুধু
মুচকি হাসে মাথাটা ঝাঁকিয়ে।
তাও আমার মাদল
টানা বেজেই চলে জোরে
বাতাসকে যা
দ্রুত লয়ে আন্দোলিত করে
বাধ্য করে
জীবিত আর মৃত মানুষদের
নাচতে আর
গাইতে তাদের ছায়ার সঙ্গে মিলে –
কিন্তু গাছের
পিছনটিতে দাঁড়িয়ে সেই মেয়ে,
কোমরে যার
পাতার পোশাক পরা,
একটু শুধু
মুচকি হাসে মাথাটা ঝাঁকিয়ে।
তারপরে সেই
মাদল বাজে পার্থিব সব কিছুর
তালে তালে আর
মিনতি করেই যেন ডাকে
আকাশের ওই
চোখদুটি – ওই সূর্য আর ওই চাঁদ
নদীর ঠাকুর আর
গাছেরা শুরু করে নাচ।
মাছগুলো সব
মানুষ হঠাৎ
মানুষগুলো মাছ
সব কিছুরই বাড়
যেন যায় থেমে –
কিন্তু গাছের
পিছনটিতে দাঁড়িয়ে সেই মেয়ে,
কোমরে যার
পাতার পোশাক পরা,
একটু শুধু
মুচকি হাসে মাথাটা ঝাঁকিয়ে।
আর তখনই আমার
ভেতরটিতে
সেই নিগূঢ়
মাদল থামে, মানুষ পুনরায়
মানুষ যে হয়,
মাছও আবার মাছ,
গাছ, সূর্য, চাঁদ
সকলে নিজের নিজের স্থানে
ফেরে এবং
মৃতেরাও ফেরে কবরডাঙায়
সব কিছু ফের
বাড়তে শুরু করে।
এবং গাছের
পিছনটিতে দাঁড়ানো সেই মেয়ের
পায়ের থেকে
শিকড় গজায়, মাথার উপর পাতা
নাক থেকে তার
নির্গত হয় ধোঁয়া
মুচকি হাসির
বিভক্ত দুই ঠোঁটের
গর্ত দিয়ে
উদ্গারিত অন্ধ অন্ধকার।
তখন, আমি
গুটিয়ে ফেলি নিগূঢ় সেই মাদল
আর ফিরে যাই,
আর এরকম জোরে যেন কক্ষনো না বাজাই।
৪।
নান নদীর ডাক
তোমার ডাক
শুনেছি আমি!
আনত এই
পাহাড়সারির বেষ্টনী ভেঙে
বহুদূর থেকে
ভেসে আসে সেই ডাক।
আমি আবার
তোমার মুখ দেখতে চাই, অনুভব করতে চাই তোমার শীতল স্পর্শ;
অথবা তোমার
পাড়ে দাঁড়িয়ে বুক ভরে টেনে নিতে চাই তোমার শ্বাস;
অথবা গাছেদের
মতো করে খুলে দেখতে চাই তোমার জলে প্রতিফলিত আমার আমিত্ব
আর ভোরের কণ্ঠ
থেকে ভেসে আসা গান শুনে কাটিয়ে দিতে চাই আমার দিনগুলো।
আমি তোমার
সাদর আহ্বান শুনেছি!
সেই ডাক, যে
শিশু শুনেছে তার প্রেতাত্মাকে জাগিয়ে,
যেখানে নদীর
পাখিরা তোমার রুপালী তলের প্রবাহকে অভিবাদন জানায়,
তার ভিতর দিয়ে
উঠে আসে।
আমার নদীও
ডাকছে!
তার অবিরাম
প্রবাহ আমার ভাঙা নৌকাটিকে
সজোরে ভাসিয়ে
নিয়ে চলেছে অনিবার্য গতিপথে।
আর প্রত্যেক
গতায়ু বর্ষ কাছে নিয়ে আসছে সমুদ্র পাখির ডাক,
সেই শেষ ডাক
যা ঝুঁটির মতো উঁচু ঢেউকেও নিশ্চল করে দেয়
আর দুভাগ করে
ছিঁড়ে ফেলে আমার উল্টানো নৌকার নীরবতার পর্দা।
হে দুর্বোধ্য
ঈশ্বর!
হে আমার নদীর
জটিল গতিপথ,
তোমাকে শেষ
ডাক ডাকবার সময়
আমার সহজাত
ভাগ্যই কি হবে আমার নিয়ন্তা ?
৫।
তুমি হেসেছিলে
আর হেসেছিলে আর হেসেছিলে
তোমার কানে
আমার গান ছিল
শ্বাসরোধকারী
কাশি দিয়ে থেমে যাওয়া
মোটরগাড়ির
চালু না করতে পারার শব্দ;
আর তুমি
হেসেছিলে আর হেসেছিলে আর হেসেছিলে।
তোমার চোখে
আমার জন্ম-পূর্ববর্তী হাঁটা ছিল
তোমার
‘সর্বগ্রাসী মেধা’র পাশ দিয়ে যাওয়া অমানবিকতা
আর তুমি
হেসেছিলে আর হেসেছিলে আর হেসেছিলে।
তুমি আমার গান
নিয়ে হেসেছিলে
তুমি আমার
হাঁটা নিয়ে হেসেছিলে।
তারপর আমি
নাচলাম আমার জাদুনৃত্য
সবাক মাদলের
সনির্বন্ধ মিনতির তালে
কিন্তু তুমি
চোখ বন্ধ করেছিলে
আর তুমি
হেসেছিলে আর হেসেছিলে আর হেসেছিলে
তখন আমি
উন্মুক্ত করলাম
আকাশের মতো
বিস্তৃত আমার নিগূঢ় অভ্যন্তর,
কিন্তু তুমি
তোমার গাড়িকে ভেতরে ঢোকানোর বদলে
হেসেছিলে আর
হেসেছিলে আর হেসেছিলে
তুমি আমার নাচ
নিয়ে হেসেছিলে
তুমি আমার
অভ্যন্তর নিয়ে হেসেছিলে
কিন্তু তোমার
হাসি ছিল
বরফকঠিন হাসি
এবং তা
জমাট করে
দিয়েছিল তোমার অভ্যন্তর, তোমার স্বর,
তোমার শ্রবণ,
তোমার দৃষ্টি, তোমার বাক্ শক্তি।
আর এবার আমার হাসবার
পালা
কিন্তু আমার
হাসি বরফকঠিন ছিল না।
কেননা আমি
কোনও মোটরগাড়ি জানি না, বরফের চাঙড় জানি না।
আমার হাসি ছিল
আকাশের
দৃষ্টির আগুন, পৃথিবীর আগুন,
বাতাসের আগুন,
সমুদ্রের, নদীর,
মাছের, প্রাণী
আর উদ্ভিদের আগুন
আর সেই আগুন
গলিয়ে দিয়েছিল তোমার অভ্যন্তর, তোমার স্বর,
তোমার শ্রবণ,
তোমার দৃষ্টি, তোমার বাক্ শক্তি।
সুতরাং এক
মধুর বিস্ময়
তোমার ছায়াকে
গ্রাস করেছিল
আর তুমি
ফিসফিসিয়ে জানতে চেয়েছিলে-
‘কেন এমন হল
?’
আর আমি উত্তর
দিয়েছিলাম-
‘কেন না
পৃথিবীর জীবন্ত উষ্ণতা
আমার
পূর্বপুরুষদের আর আমার
ভেতরে প্রবেশ
করেছে
আমাদের নগ্ন
পায়ের মাধ্যমে’।
৬।
বালতিতে চাঁদ
দ্যাখো!
দ্যাখো ওই
বালতির ভেতর।
নোংরা জলে ভরা
মরচে-পড়া বালতিটিতে।
দ্যাখো!
উজ্জ্বল যে
থালাটি ভেসে আছে –
চাঁদ, রাত্রির
মৃদু বাতাসের সাথে নাচছে
দ্যাখো!
তোমরা, যারা একরাশ ঘৃণা নিয়ে দেওয়ালের
ওপার থেকে
চিৎকার করো, নৃত্যরত চাঁদকে দ্যাখো।
তাইই শান্তি,
যা ধূলি আর অন্ধকারে কলুষিত নয়
এই বালতির
যুদ্ধে।
৭।
তুষার
কণিকাগুলি মোলায়েম ভাবে নেমে আসে
আকাশের কুয়াশাচ্ছন্ন
চোখ থেকে
তুষার
কণিকাগুলি মোলায়েম ভাবে নেমে আসে
আর হাল্কা
হাল্কা পড়তে থাকে
শীতার্ত ওই
দেবদারু গাছে, তার ডালপালাগুলি
শীতের চাবুক
খাওয়া আর নগ্ন,
ধীরে ধীরে
ভারহীন তুষারের ভারে
দুঃখপীড়িত
শবানুগমনকারীর মতো নত হয়ে থাকে,
যেভাবে
অন্ত্যেষ্টির শ্বেত বস্ত্র
ধীরে ধীরে
পাতা হয় মৃত্যুহীন পৃথিবীর বুকে।
আর চুল্লি
থেকে গোপনে উঠে আসে মরণ-ঘুম
আর জল পড়ার
রেশমি তুলোর স্পর্শ
বন্ধ করে দেয়
আমার চোখ।
তখন আমি আমার
মরণ-ঘুমের ভেতরে
একটি স্বপ্ন
দেখি।
কিন্তু
পৃথিবীর মৃত্যু হচ্ছে বা দেবদারু তাকে
রাত জেগে
পাহারা দিচ্ছে এমন স্বপ্ন নয়,
আমি স্বপ্ন
দেখি পাখিদের –
কালো পাখিরা
আমার ভেতরে উড়ছে,
পাম তেলের
গাছে বাসা বাঁধছে, ডিম পাড়ছে,
ফলের জন্য
সূর্যকে ধরে আনছে
আর ঠোক্কর
দিয়ে ভোঁতা করে দিচ্ছে
শিকড়-উৎপাটনকারীদের
কোদাল।
স্বপ্নে আমি আরও
দেখি
শিকড়-উৎপাটনকারীরা
ক্লান্ত আর নিস্তেজ হয়ে
এলিয়ে পড়ছে
আমারই শিকড়ে – তাদের হাল ছেড়ে দেওয়া শিকড়ে,
আর পাম তেলের
গাছ তাদের সবাইকে একটি করে সূর্য দেয়।
কিন্তু তারা
তাদের করতলে চোখ ঝলসানো গোলকটিকে রেখে
সন্দেহের বশে
ভুরু কোঁচকায়-
সূর্য তো
সোনার মতো উজ্জ্বল নয়!
তখনই আমি জেগে
উঠি, আমি জেগে উঠি
তুষারপাতের
নীরবতার মধ্যে
আর পিঠবাঁকা
দেবদারু নত হয়
আর শীতের
হাওয়ায় দোলে,
যেভাবে সাদা
আলখাল্লা পরা মুসলমানেরা
সন্ধ্যায়
নামাজ পড়ে সেইভাবে,
আর মন্দিরে
দেবতার মুখের মতো
পৃথিবীও
দুর্জ্ঞেয়ভাবে অবস্থান করে।
No comments:
Post a Comment