Saturday, October 13, 2018

সোফিয়া পাণ্ডিয়া-র কবিতা (পাকিস্তান) অনুবাদ : অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়






দক্ষিণ এশীয়-আমেরিকান কবি সোফিয়া পাণ্ডিয়া-র জন্ম ১৯৬৪ সালে, পাকিস্তানে। বর্তমানে ক্যালিফোর্ণিয়ায় থাকেন। সোফিয়া-র পূর্বপুরুষ ভারতীয়। কবিতা লেখেন ইংরেজি ভাষায়। ওঁর লেখায় জুড়ে আছে ভাষাতাত্বিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, লৌকিক, ব্যক্তিক, ভৌগোলিক, মেটাফিজ়িক্যাল সীমান্ত। সোফিয়া-র কবিত্ব যেন এক হাইফেনের অধিবাসী। শব্দের ইতিহাস ও ব্যুৎপত্তির প্রতি প্রচণ্ড অবসেশন। ভাষার ইন্দো-ইউরোপীয়ান বিবর্তনের প্রেক্ষিতে শব্দের অতীত অবস্থা থেকে বর্তমান ‘রূপ’ ও ‘অর্থ’ অবধি যাত্রাপথের দিকে ওঁর মগ্নতা দেখা যায়। কবীর এবং বুল্লে শাহ্‌-র মরমিয়াবাদের সমান্তরাল এক ভাষাকাঠামো স্পষ্ট ওঁর লেখায়, যা প্রকৃতপক্ষে ইংরেজি ভাষার ‘ডিকলোনালাইজ়েশন’। নিজের কবিতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সোফিয়া লিখছেন,—
‘কবিতাকে আমি ধারণ করি অশরীরী শিকড়ের মতো, যার সাথে নিয়ে চলেছি গভীর এক ইতিহাস, যা আমাদের অন্তর্গত ও বহিঃ ইকোলজির নিস্তেজ ভাটা ও স্রোতের মধ্যে প্রোথিত সজাগ এক এ্যাণ্টেনা। এই সমস্ত উপাদানের সাথে কাজ ক’রে স্পষ্ট এক স্বর নির্মাণই আমার মূল রাসায়নিক প্রক্রিয়া। মূলগত ভাবে স্বতন্ত্র, ভিন্ন বিষয় ও উৎস নিয়ে আমার কাজ। যেখানে ভাষার র’ মেটালকে নিয়ে অনবরত চলতে থাকে রিফাইনিং, জাক্সট্যাপোজিং, তাকে বাঁকানো-মোচড়ানো।’   

ওঁর সাম্প্রতিক কিছু কবিতা বাঙলায় অনুবাদের চেষ্টা করলাম। 
—অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়





ছবিঃ সোফিয়া পাণ্ডিয়া 

পাথর, কালো পাথর
কালো পাথর, আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে
পরের পৃথিবীতে তোমার একটা জিভ থাকবে
গলায় স্বর, থাকবে।
যারা তোমাকে ছুঁয়েছে
আমি ঠিক ব’লে বোঝাতে পারব না এমন কাঁটায়, হেঁটেছে
শাপমুক্তির প্রলোভন যারা ফেরাতে পারত
কোনও প্রশ্ন করেনি
কোনও প্রায়শ্চিত্ত করেনি ক্ষতিপূরণের জন্য  
নরম ছিল
পাথরের চুম্বন
সকালের হাড়গোড়ে
গাছের পাতার ডগার ওপর যেন
বেডকভারের ঠোঁট

আদুড়
উজ্জ্বল, কোনওমতে
আমি গিয়েছি   
খালি হাতে আমার বর্তমান কালকে অতীত করতে করতে
হোঁচট খেয়েছি
যখন আমি মরলাম
দিন এবং রাতের
ভাঁজের মাঝখানে
বেদানার একটামাত্র বীজ গড়াতে গড়াতে চললো
কালো পাথর, রাত ঢাকতে এসেছ তুমি
সূক্ষ্ম চামড়ার মতো
বন্ধুর মতো
প্রেমিকের মতো
একদল যাযাবরের মাঝখানে
যারা গোল হয়ে ব’সে একটুকরো খাবার খাচ্ছে
আনন্দে, মচ্‌মচ্‌ ক’রে
খুঁটিতে বাঁধা সময়, যে ঘুরছে বন্‌ বন্‌
পুনরাবৃত্তির এই অনুষ্ঠানবিধি
জরায়ু থেকে সমাধি পর্যন্ত
মানুষের এই চুক্তিপথকে
এগিয়ে দিচ্ছে
এবং এখনও আমি
Undo করতে পারছি না
আমার ছড়ানো হাতের তালুতে বোনা গিঁট
তুমি মাছ ধরছ
বুদবুদ নিয়ে খেলছ
খেলছ এই পৃথিবীটাকে নিয়ে
যে কোনও লক্ষ্য ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছে এলোমেলো
আমার মনের মধ্যে
প্রত্যেকটা মুহূর্তকে খুলছি
এক একটা গিফট-প্যাকের মতো
আনন্দে চেঁচিয়ে উঠছি
এটাই কিন্তু জারি রাখছে আমার চলাটাকে
এর জন্যই জেগে উঠছি
একেই জড়িয়ে ধরছি
শক্ত ক’রে
যতক্ষণ না পরের
ঘোলাটে-সময় হাওয়ায় ভাসিয়ে দিচ্ছে
নীলগাছের পর্দা
যেন একটা জাল
অন্ধকার ক’রে দিচ্ছে
আকাশের জল
আমাকে ঢেকে ফ্যালে আকাশে পাতা ফাঁদ
তোমার আলোক-সময়ে
একটা মাছ হয়ে আমি পড়ে যাচ্ছি
সমান্তরাল এক সমুদ্র সৈকতে
রাত, তোমার কোষাগারের
দৌলত দেখে ফেলছি
আমার চোখে
তার গাঢ় কালোতে ঢেকে রাখছি তোমায়
রাত, আমার রত্ন-পাথর তুমি
দেবতার সোনা
আমার সব গোপন কথাগুলি ঢালছি তোমার মধ্যে
একলা কবচ-কুণ্ডলী,
ধারণ করে আছি তোমাকে
এসবের মাঝখানে,
সেলাই না করা এই চামড়ার রাজত্বে
আত্মা বেরিয়েছে উলঙ্গ তীর্থ যাত্রায়

(রচনাকাল – ২০০৯)




যতক্ষণ না
এই ক্ষমাপ্রবণ রাতের, চিরস্থায়ী হলুদ জণ্ডিস চোখে
ভাঁজ ক’রে নিচ্ছ তোমার ডানা

যতক্ষণ না

এই বিদ্রুপাত্মক চাঁদকে আমরা টস্‌ করছি
এই অন্ধকারের অসম্মত মোনোপলিতে
তার ভ্রূ’র সেকেলে পয়সায়

যতক্ষণ না

অবিরাম এক কৌশলে সব ভক্তি উবে যাচ্ছে
এখনও জন্ম না নেওয়া পাথরের ত্রিভুজে
গাঁক গাঁক ক’রে বাজছে যে লাউডস্পিকার

যতক্ষণ না

মস্কুইটো কয়েলের জটিল ধাঁধা
তাদের সমস্ত গোপনীয়তা ঢেলে দিচ্ছে
পৃথিবীহীন ছাইয়ের গাদায়

যতক্ষণ না

গোলাপি খোসা ছাড়ানো দেওয়ালে মৃত এই ধর্মগুলিকে আমি মুক্ত করছি

যতক্ষণ না

হাওয়া, সূর্য এবং ঢেউয়েরা
তাদের শেষ আচমন সেরে নিচ্ছে
এই হাতে

(রচনাকাল – ২০১৩)


   ছবিঃ সোফিয়া পাণ্ডিয়া 

ডানা ফেলে গেছে যারা
আমার গলাধঃকরণের পর সেই সমস্ত উপাদান আমায় বয়ে নিয়ে গেছে, যা আমি একটু আগে গিলেছি

একটি অসমাপ্ত
নীরবতার ভেতর একটি অপরাধ
একটি মৃত হামিংবার্ড

বিচ্ছেদ ঘ’টে যাওয়া দুই প্রেমিক-প্রেমিকার জুটি

মৃতের রাতে আমার ভেতর আমি ফিরে আসি, চুরি করতে

একটি ভাঙা দরজা
একটি হারানো খিল
নদী পেরোচ্ছে একটি নদী

রঙ পেন্সিলের একটি সমাধিপ্রস্তর

একটি দিক্‌শূন্য পাখি
ভাঙা আয়নার একটি হাত
গুজব ভরা এক উলের গোল্লা

আমি সূর্যকে দেখেছি তার অন্ধ-মেধা দিয়ে আলো ঝলকাচ্ছে

তালগোল পাকানো একগাদা চামচ
একটি দু-চাকার ঠেলা
চন্দ্রতাপ ভরা একটি সিন্দুক, (দেরাজঅলা)

তীব্র গস্‌পেল

একজোড়া জীবন
এক অনাথ রোজগার
একটি স্পাইডার লিলি

কাগজের সরু ডানা

রসুলের ওপরে নিকট হচ্ছি এবং
রসুলের নীচেও এবং আমি;

এক নেড়ি কুকুরের কান্না
একঝাঁক সম্রাট, মেঘহীন
একটি প্রজাপতি

এঁদেরই তো পুজো করেছি মুখোমুখি ব’সে

একটি জল ভরা শাঁখ, একটি মুকুট-শঙ্খ
প্যাঁচানো খোলের এক বিরাট শামুক, একটি কাঁটাওলা ঝিনুক
এক সামুদ্রিক দুরন্ত শিশু

চাঁদের খোলস

জাদুতন্ত্রে থ’ হয়ে আমি ঘটলাম
সেখানেই বসন্ত হ’ল
আমার গলার ভেতর স্বর্গের ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা কাচ

একটি গুটিপোকা
সূর্য আলগা ক’রে দিচ্ছে
সেলোফেন চামড়া

খোলা ফ্লুরোসেন্ট

আমার শরীর আমি ঢেকে নিলাম সেইসব আঢাকা বিন্দুতে। কাঁদলাম।

একটি ঘুমন্ত নদী
একটি কাগজের পাখি
একটি হাজার বছর



নিউ-ইয়র্ক টাইমসের শব্দছক যেভাবে সমাধান করতে হয়
A
সাইরেন কেঁদে যাচ্ছে চিল-চিৎকারে
    W
ইউলেসেস জলে ডুবে গেল
i
W
ওরা বেজিঙে ছুটে গেছে
            i
              W
নদীগুলো বাঁধে ঘিরো না
i
বা*       বা*       বা*       বা*       বা*
i           i           i           i
প্রতিটা আকাশে আঙুল  
তারাযুদ্ধ দ্রোণ
i           e
i           যুদ্ধ এসবের পরোয়া করে না
            e
            i
  কবিতা একটি সমান্তরাল শিল্প
                                    i           i           i
ড্যামেজগুলো এর মধ্যেই লেখা আছে
i           i
ইতিমধ্যে  
                    i
(রচনাকাল – এপ্রিল, ২০১৩)
 

Ø Translator’s Note : All artwork by the poet, Sophia Pandeya
Ø ©  Sophia Pandeya
Ø Translation © Arjun Bandyopadhyay 2015 
Ø Courtesy: www.trancelucence.net, Poetry International  


No comments:

Post a Comment

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে